ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নতুন তথ্য প্রকাশ করল পেন্টাগন

মার্কিন প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগন বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় চালানো তাদের ‘ম্যারাথন বোমা হামলা’ সম্পর্কে নতুন কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে। তবে, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে কতটা ক্ষতি করেছে, সে বিষয়ে মূল প্রশ্নগুলোর উত্তর এখনও মেলেনি।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতিশ্রুতি ছিল এই ব্রিফিং ‘আকর্ষণীয় ও অকাট্য’ হবে। ব্রিফিংয়ে প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ‘ইতিহাসের সবচেয়ে গোপন ও সবচেয়ে জটিল সামরিক অভিযান’ চালিয়েছে।
জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফের চেয়ারম্যান জেনারেল ড্যান কেইন এই অভিযানের প্রস্তুতি ও পরিচালনার কিছু আকর্ষণীয় বিবরণ তুলে ধরেন।
ট্রাম্প বলেছেন, হামলাগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে ‘নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে। তবে, ট্রাম্পের এই দাবির পক্ষে কোনো নতুন গোয়েন্দা তথ্য দেওয়া হয়নি।
জেনারেল কেইন এই অভিযানে অংশ নেওয়া ক্রু ও ব্যাপক প্রস্তুতি সম্পর্কে কিছু নতুন তথ্য প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, বোমা তৈরিতে অনেক বিশেষজ্ঞ কাজ করেছেন, যারা ‘সুপার কম্পিউটারের সর্বাধিক ব্যবহারকারী’ হয়েছিলেন।
৩৭ ঘণ্টার এই অভিযানে ক্যাপ্টেন থেকে কর্নেল পদমর্যাদার নারী ও পুরুষ উভয় কর্মীই অংশ নিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে বিমান বাহিনীর সক্রিয় সদস্য ও মিসৌরি এয়ার ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যরাও ছিলেন।
জেনারেল কেইন কর্মীদের আত্মত্যাগ স্মরণ করে বলেন, ‘শুক্রবার যখন ক্রুরা কাজে যায়, তখন তারা তাদের প্রিয়জনদের বিদায় জানায়, তারা কখন বা কখনো বাড়িতে আসবে কিনা তা জানে না।’
অভিযানের কয়েকদিন আগে ইরান পাহাড়ের গভীরে থাকা ফোর্ডো পারমাণবিক স্থাপনাকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু জেনারেল কেইন বলেন, মার্কিন পরিকল্পনাকারীরা এই সুরক্ষার বিষয়ে জানতেন ও সে অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। ৩০ হাজার পাউন্ডের বাঙ্কার-বাস্টার বোমাগুলো পরিকল্পিতভাবে কাজ করেছে ও এটি ছিল যুদ্ধে তাদের প্রথম ব্যবহার। ভিডিওতে দেখা গেছে, বোমাগুলো কীভাবে বাঙ্কারের ভেতরে ঢুকে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে।
সামরিক কর্মকর্তারা হামলার পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু নতুন তথ্য দিলেও ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর এর কার্যকারিতার কোনো নতুন প্রমাণ দেননি। কেইন ও হেগসেথ উভয়ই এই বিষয়ে প্রশ্নগুলো গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দিকে ঠেলে দিয়েছেন।
ব্রিফিংয়ে মূলত ফোর্ডো পারমাণবিক স্থাপনার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে, তবে নাতানজ ও ইসফাহানের মতো অন্যান্য লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে তেমন কিছু বলা হয়নি।
ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ পরিমাণ এখনও অস্পষ্ট। হেগসেথ বলেন, ‘সেখানে কেউ ক্ষতির মূল্যায়ন করতে সক্ষম নয়।’ কেইনও উল্লেখ করেন, যুদ্ধক্ষেত্রের ক্ষয়ক্ষতির মূল্যায়ন সামরিক বাহিনী দ্বারা নয়, বরং গোয়েন্দা সম্প্রদায়ের দ্বারা করা হয়।

প্রাথমিক মূল্যায়নে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল, হামলাগুলো ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির মূল উপাদান ধ্বংস করেনি, বরং কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে। যদিও সিআইএ পরিচালক পরে দাবি করেন, স্থাপনাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে ও পুনর্গঠনে কয়েক বছর লাগবে।
হেগসেথ ট্রাম্পের ‘ইরানি পারমাণবিক কর্মসূচি বিলুপ্ত’ করার দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে গেছেন, তবে বোমা ফেলার কয়েক ঘণ্টা পর প্রেসিডেন্ট কীভাবে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছালেন, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন।
পেন্টাগন এই অভিযানকে ‘ঐতিহাসিকভাবে সফল’ বললেও এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাবের মূল্যায়ন এখনও চলছে।