ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথভাবে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন তৈরি করবে ভারত

অবশেষে পঞ্চম প্রজন্মের নিজস্ব স্টেলথ যুদ্ধবিমানের জন্য শক্তিশালী নতুন জেট ইঞ্জিন তৈরিতে ফ্রান্সের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে ভারত। এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও শক্তিশালী হবে বলে জানিয়েছে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়ার।
শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ডিআরডিও) শিগগিরই মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির কাছে প্রকল্প অনুমোদনের প্রস্তাব পাঠাবে। ফরাসি প্রতিরক্ষা সংস্থা সাফরান-এর সঙ্গে যৌথভাবে নতুন ১২০ কিলোনিউটন ক্ষমতার জেট ইঞ্জিন ভারতে তৈরি করা হবে। এই প্রকল্পে শতভাগ প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে নকশা, উন্নয়ন, পরীক্ষা, সনদ, উৎপাদন সবকিছুই যৌথভাবে সম্পন্ন হবে।
ডিআরডিওর গ্যাস টারবাইন রিসার্চ এস্টাবলিশমেন্ট (জিটিআরই) এর সহযোগিতায় প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। সাফরান বর্তমানে ভারতে বিভিন্ন হেলিকপ্টার ইঞ্জিন তৈরি করে থাকে।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং শুক্রবার (২২ আগস্ট) এক অনুষ্ঠানে বলেন, “আমরা পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান তৈরিতে এগিয়ে গেছি। এবার বিমানের ইঞ্জিনও ভারতেই তৈরি করা হবে। ফরাসি সংস্থা সাফরানের সঙ্গে আমরা এই কাজ শুরু করতে যাচ্ছি।”
ভারতের জন্য যথাযথ থ্রাস্ট-টু-ওয়েট রেশিও সমৃদ্ধ বিমান ইঞ্জিন তৈরি না করতে পারা দেশীয় যুদ্ধবিমান প্রকল্পের সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন কোম্পানি জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) তৈরি জিই-এফ৪০৪ টার্বোফ্যান ইঞ্জিন ৯৯ ইউনিট সরবরাহে প্রায় দুই বছরের বেশি দেরি হয়েছে। এই দেরি এবং অস্ত্র ও রাডার সংযোজনের সমস্যার কারণে তেজস মার্ক-১এ যুদ্ধবিমান তৈরির গতি অনেকটা মন্থর হয়ে যায়।
এছাড়া, হিন্দুস্তান অ্যারোনটিকস লিমিটেড (এইচএএল) ও জিই এখনো ১.৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারেনি, যার মাধ্যমে জিই-এফ৪১৪ ইঞ্জিন (৯৮ কিলোনিউটন ক্ষমতা) ভারতে যৌথভাবে তৈরি হওয়ার কথা।
কর্মকর্তারা জানান, সাফরানের সঙ্গে এই প্রকল্পে তৈরি জেট ইঞ্জিনের সম্পূর্ণ মেধাস্বত্ব ও লাইসেন্সিং নিয়ন্ত্রণ ভারতের হাতে থাকবে। এর ফলে দেশেই বিমান ইঞ্জিন উৎপাদনের জন্য পূর্ণাঙ্গ সাপ্লাই চেইন ও শিল্পখাতের উন্নয়ন ঘটবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গত মে মাসে ২৫ টনের অ্যাডভান্সড মিডিয়াম কমব্যাট এয়ারক্রাফট (এএমসিএ) এর প্রোটোটাইপ তৈরির জন্য নতুন কার্যপদ্ধতি অনুমোদন করেছে। এর আওতায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বাড়ানো হবে।

নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী, আধুনিক সেন্সর ফিউশন, স্টেলথ ফিচার (যেমন অভ্যন্তরীণ অস্ত্র বহন ব্যবস্থা ও ‘সার্পেন্টাইন এয়ার-ইনটেক’) সমৃদ্ধ এএমসিএ যুদ্ধবিমান ২০৩৫ সালে উৎপাদনের জন্য প্রস্তুত হবে।
ভারতীয় বিমান বাহিনী (আইএএফ) মোট ১২৬টি এএমসিএ সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে। প্রথম দুটি স্কোয়াড্রনে মার্কিন জিই-এফ৪১৪ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হবে, আর বাকি পাঁচটি স্কোয়াড্রন চলবে ভারত-ফ্রান্স যৌথভাবে তৈরি ১২০ কিলোনিউটন ইঞ্জিনে।