গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নতুন করে তীব্র হামলায় শুক্রবার (২২ আগস্ট) ভোর থেকে অন্তত ৬৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে শুধু গাজা সিটিতেই নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩৭ জন।
চিকিৎসা সূত্রের বরাত দিয়ে শুক্রবার (২২ আগস্ট) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গাজা সিটির শেখ রাদওয়ান এলাকায় একটি স্কুলে আশ্রয় নেওয়া বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ১২ জন নিহত হন। এ সময় স্কুলের মাঠে তাঁবু টাঙিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন বহু বাস্তুচ্যুত পরিবার।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ও আল জাজিরার যাচাই করা ভিডিওতে দেখা যায়, একটি ভবনের ওপরে ইসরায়েলি কোয়াডকপ্টার ড্রোন ঘোরাফেরা করছে। স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্বেগভরে তাকিয়ে থাকতেই সেটি বিস্ফোরক ফেলে দেয়। পরে লক্ষ্যবস্তুতে আগুন ও ধোঁয়া উঠতে দেখা যায়।
এর আগে, গাজা সিটির তুফাহ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন বলে আল-আহলি হাসপাতালের চিকিৎসকরা নিশ্চিত করেছেন।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, হামাস ইসরায়েলের শর্ত না মানলে গাজা সিটি ধ্বংস করে দেওয়া হবে।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, “হামাসের হত্যাকারী ও ধর্ষকদের মাথার ওপর শিগগিরই নরকের দরজা খুলে যাবে—যতক্ষণ না তারা যুদ্ধ শেষের জন্য ইসরায়েলের শর্ত মেনে নেয়।”
ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির যে শর্ত দিয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে—সব বন্দিকে মুক্তি দেওয়া এবং হামাসের সম্পূর্ণ নিরস্ত্রীকরণ। তবে হামাস জানিয়েছে, তারা যুদ্ধ সমাপ্তির বিনিময়ে বন্দিদের মুক্তি দিতে রাজি, কিন্তু স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া নিরস্ত্রীকরণ মেনে নেবে না।
এর মধ্যে কাতার ও মিশরের মধ্যস্থতায় নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ইতোমধ্যেই গ্রহণ করেছে হামাস। এ বিষয়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার জানিয়েছেন, তিনি কর্মকর্তাদের তাৎক্ষণিক আলোচনার নির্দেশ দিয়েছেন। তবে একই সঙ্গে তিনি গাজা সিটিতে বড় ধরনের সামরিক অভিযানেরও অনুমোদন দিয়েছেন, যা কয়েক দিনের মধ্যেই শুরু হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আল জাজিরার গাজা প্রতিনিধি তারেক আবু আজযুম জানিয়েছেন, গাজা সিটি সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও পুরো গাজাজুড়েই হামলা অব্যাহত রয়েছে।
তিনি বলেন, “গাজায় আরও একটি রক্তাক্ত রাত পার হয়েছে। নতুন দিন শুরু হয়েছে গভীর শোক ও অসহনীয় বেদনার মধ্য দিয়ে, যা নিহতদের স্বজন ও জরুরি সেবাদাতাদের মুখে স্পষ্ট।”
দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনূসে একটি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় এক নারী ও চার শিশু নিহত হন। অন্যদিকে উত্তর গাজার জাবালিয়া আল-বালাদ এলাকায় একজন নিহত এবং কয়েকজন আহত হয়েছেন।
চিকিৎসা সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার নিহতদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন সাহায্যপ্রার্থী। কেন্দ্রীয় গাজার নেটজারিম করিডরের কাছে সাহায্য চাইতে গেলে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে একজন নিহত হন এবং আরও কয়েকজন আহত হন।

এদিন জাতিসংঘ-সমর্থিত বৈশ্বিক ক্ষুধা পর্যবেক্ষণ সংস্থা (আইপিসি) আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়, গাজার উত্তরাঞ্চলে দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে এবং সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ এটি মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়বে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৭ মে যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত বিতর্কিত জিএইচএফ-এর সহ-পরিচালনায় নতুন খাদ্য সহায়তা বিতরণ প্রক্রিয়া চালুর পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২ হাজার ৩৬ জন সাহায্যপ্রার্থী নিহত হয়েছেন।