গাজায় বিদেশি গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের দাবি যুক্তরাজ্যসহ ২৭ দেশের

গাজায় স্বাধীন বিদেশি গণমাধ্যমের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে যুক্তরাজ্যসহ ২৭টি দেশ যৌথ বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছে। ফ্রান্স, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া ও জাপানও মিডিয়া ফ্রিডম কোয়ালিশন প্রকাশিত এই বিবৃতিতে সই করেছে। সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের অধিকার ও সুরক্ষার পক্ষে কাজ করে থাকে। খবর বিবিসির।
বিবৃতিতে গাজায় সাংবাদিকদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, সেখানে কর্মরত গণমাধ্যমকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে ইসরায়েল স্বাধীন আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কেবলমাত্র সীমিত কিছু ক্ষেত্রে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ)-এর নিয়ন্ত্রিত সফরের মাধ্যমে কিছু সাংবাদিককে সেখানে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সাংবাদিক সুরক্ষা কমিটি (সিপিজে)-এর তথ্যমতে, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে অন্তত ১৯২ জন সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই ফিলিস্তিনি। এটি ইতিহাসে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী সংঘাত হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) প্রকাশিত এই যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “চলমান মানবিক বিপর্যয়ের” প্রেক্ষাপটে এই আহ্বান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সীমিত করার বা সাংবাদিকদের প্রবেশ রোধ করার যেকোনো প্রচেষ্টার আমরা বিরোধিতা করি।”
এছাড়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সাংবাদিকদের “ইচ্ছাকৃতভাবে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা” অগ্রহণযোগ্য এবং এই ধরনের হামলার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
চলতি মাসের শুরুতে গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের কাছে ইসরায়েলি হামলায় আল জাজিরার চার সাংবাদিক নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন- আলোচিত প্রতিবেদক আনাস আল-শরীফ, সাংবাদিক মোহাম্মদ কুরেইকেহ এবং ক্যামেরাপারসন ইব্রাহিম জাহের ও মোহাম্মদ নুফাল। এ সময় আরও দুই ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক মোয়ামেন আলিওয়া ও মোহাম্মদ আল-খালদি নিহত হন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পরে জানায়, তারা আনাস আল-শরীফকে লক্ষ্যবস্তু করেছিল, কারণ তিনি নাকি হামাসের একটি সশস্ত্র সেলের প্রধান ছিলেন। তবে সিপিজে জানিয়েছে, ইসরায়েল এই অভিযোগের পক্ষে কোনো প্রমাণ দেয়নি, আর আল জাজিরাও এসব দাবি অস্বীকার করেছে।
আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকায় স্থানীয় সাংবাদিকরাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের জন্য সরাসরি খবর প্রচার করে যাচ্ছেন।
গত বছর ইসরায়েলের হাইকোর্ট জানিয়েছিল, গাজায় প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা নিরাপত্তার কারণে যৌক্তিক। তবে ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন আদালতে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়ে বলেছে, এই “অভূতপূর্ব সীমাবদ্ধতা” স্বাধীন প্রতিবেদনে গুরুতর বাধা সৃষ্টি করছে।
গাজায় থাকা সাংবাদিকদের পরিস্থিতি এখন আরও শোচনীয়। ইসরায়েলি হামলার পাশাপাশি তাদের অনেকে ক্ষুধা ও অনাহারের মুখে পড়েছেন। গত মাসে বিবিসি, রয়টার্স, এপি এবং এএফপি যৌথ বিবৃতিতে গাজার সাংবাদিকদের অবস্থা নিয়ে “চরম উদ্বেগ” প্রকাশ করে বলেছিল, অনেকেই নিজেদের এবং পরিবারের জন্য ন্যূনতম খাদ্য জোগাড় করতেও অক্ষম হয়ে পড়েছেন।
১০০-রও বেশি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও ত্রাণ সংস্থা সতর্ক করে বলেছে যে গাজায় গণঅনাহারের ঝুঁকি ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে।
ইসরায়ে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে, এসব সংস্থার অভিযোগকে “হামাসের প্রচারণার অংশ” বলে দাবি করলেও নিজেদের সরকারি পরিসংখ্যানেই স্বীকার করেছে যে মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত গাজায় পাঠানো খাদ্যসামগ্রীর পরিমাণ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (ডব্লিউএফপি) নির্ধারিত ন্যূনতম প্রয়োজনীয়তার অনেক নিচে ছিল।

এদিকে গাজা সিটিতে স্থল অভিযানের প্রাথমিক ধাপ শুরু করায় ফিলিস্তিনিদের নিয়ে আশঙ্কা আরও বেড়েছে।
গত মাসে যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় সংক্রান্ত পরোক্ষ আলোচনা ভেস্তে যাওয়ার পর ইসরায়েল গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৬২ হাজার ১২২ জন নিহত হয়েছেন বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো এই পরিসংখ্যানকেই সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য হিসেবে উল্লেখ করছে।