পাকিস্তানে আকস্মিক বন্যায় নিহত বেড়ে ২৩৪, অর্ধেকই শিশু

পাকিস্তানে চলমান মৌসুমি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট বন্যায় মৃতের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে ২৩৪ জনে দাঁড়িয়েছে, যার প্রায় অর্ধেকই শিশু। জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (এনডিএমএ) জানিয়েছে, জুনের শেষের দিক থেকে এই সংখ্যা বেড়েছে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) খাইবার পাখতুনখোয়া (কেপি) ও গিলগিট-বালতিস্তানে (জিবি) ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হয়েছেন।
ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে কেপি ও গিলগিট-বালতিস্তানের বেশ কয়েকটি জেলায় আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, নদী ও স্রোতে পানির স্তর বৃদ্ধি পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ এনডিএমএকে ক্ষতিগ্রস্তদের কাছে তাৎক্ষণিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রাদেশিক সরকার ও সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর সঙ্গে সমন্বয় সাধনের নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রাদেশিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ (পিডিএমএ) অনুসারে, সোয়াতে চার শিশুসহ ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। বাজাউরে দুজনের এবং বুনের ও উচ্চ কোহিস্তানে প্রত্যেকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সোয়াতে সুর ধেরি নালায় দুই শিশু ভেসে গেছে, মাদিয়ান এলাকায় ছাদ ধসে তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। খাওয়াজখেলায় এক মহিলা বন্যায় ভেসে গেছেন। বাজাউরের লো মামন্ড এলাকায় দুজন পুরুষ ও আপার কোহিস্তানে একজন মহিলা আকস্মিক বন্যায় ভেসে গেছেন। বুনেরেও একজনের মৃত্যু হয়েছে।
রেসকিউ ১১২২ জানিয়েছে, দানিয়র নালায় আকস্মিক বন্যা আবাসিক সম্প্রদায়গুলোকে প্লাবিত করেছে, ফসল ও সেচ ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে। বন্যার ফলে সংযোগ সড়ক ও ঝুলন্ত সেতুও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, চিলাসের থর নালায় উচ্চ স্তরের বন্যা ওয়াপদা কলোনিকে প্লাবিত করেছে, যার ফলে বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। আস্তোর জেলার বোলান এলাকায়ও ধ্বংসের খবর পাওয়া গেছে, যেখানে একজন মহিলার মৃত্যু হয়েছে।
এদিকে, জিবি সরকারের মুখপাত্র ফয়জুল্লাহ ফারাকের মতে, বাবুসার হাইওয়েতে আটকা পড়া ২৫০ জন পর্যটক ও যাত্রীকে ডায়ামার জেলা প্রশাসন, স্বেচ্ছাসেবক, পুলিশ, রেসকিউ ১১২২ ও সেনাবাহিনী উদ্ধার করেছে। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রের মতে, ১০ থেকে ১৫ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের খুঁজে বের করার জন্য তল্লাশি অভিযান চলছে। স্কার্দু-দেওসাই সড়ক বন্ধ থাকার কারণে দেওসাইতে আটকে পড়া পর্যটকদেরও উদ্ধার করা হয়েছে।
মৃতের সংখ্যা ও পরিসংখ্যান
জুনের শেষের দিক থেকে দেশে চলমান মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। এনডিএমএ-র মতে, এই পর্যন্ত ২৩৪ জন প্রাণ হারিয়েছেন ও ৫৯৬ জন আহত হয়েছেন। তাছাড়া, ২৬ জুন থেকে ৮২৬টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ও ২০৩টি গবাদি পশু মারা গেছে। ২৩৪ জনের মৃত্যুর মধ্যে ৭৯ জন পুরুষ, ৪২ জন মহিলা এবং ১১৩ জন শিশু রয়েছে।
পাকিস্তান আবহাওয়া বিভাগ (পিএমডি) গিলগিট-বালতিস্তান ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় হিমবাহের হ্রদ বিস্ফোরণে বন্যার (গ্লোফ) জন্য নতুন সতর্কতা জারি করেছে।

মঙ্গলবার জারি করা পিএমডি-এর একটি পরামর্শে বলা হয়েছে, চলমান বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে ও সপ্তাহজুড়ে কেপি এবং জিবি-তে প্রভাব ফেলতে পারে। বিদ্যমান আবহাওয়ার কারণে জিবি ও কেপি-এর ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে গ্লোফ, আকস্মিক বন্যা এবং ভূমিধসের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। আবহাওয়া অফিস স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক থাকতে এবং মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছে।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে প্রাণহানির ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়ক ও সংযোগ সড়কগুলোর পুনরুদ্ধার দ্রুত করার জন্য জাতীয় মহাসড়ক কর্তৃপক্ষ এবং ফ্রন্টিয়ার ওয়ার্কস অর্গানাইজেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।