উচ্চকক্ষের নিয়ন্ত্রণ হারাল জাপানের ক্ষমতাসীনরা

জাপানে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ উচ্চকক্ষ নির্বাচন দেশটির ক্ষমতাসীন জোটের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও তাদের জোটসঙ্গী কোমেইতো পার্টি মিলিয়ে ২৪৮ আসনের উচ্চকক্ষ হাউস অব কাউন্সিলরসে মাত্র ১২২টি আসন নিশ্চিত করতে পেরেছে, যা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ১২৫ আসনের চেয়েও কম। খবর আল জাজিরার।
রোববার (২০ জুলাই) অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতাসীন জোট মাত্র ৪৭টি আসনে বিজয়ী হয়েছে, যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে অন্তত ৫০টি আসন দরকার ছিল। এর ফলে ইশিবার নেতৃত্বাধীন সরকার উচ্চকক্ষেও সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। এর আগে গত অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নিম্নকক্ষ নির্বাচনে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছিল।
নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর রাষ্ট্রীয় সম্প্রচার মাধ্যম এনএইচকে-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা বলেন, “এই কঠিন ফলাফল আমি গভীরভাবে ও বিনীতভাবে গ্রহণ করছি। বর্তমান পরিস্থিতি জটিল এবং আমাদের তা গুরুত্বসহকারে নিতে হবে।” তবে, এতসব ধাক্কার পরও তিনি প্রধানমন্ত্রীর পদে থাকার সংকল্প প্রকাশ করেছেন।
এবারের নির্বাচনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল আগে প্রান্তিক বলে বিবেচিত ডানপন্থী পপুলিস্ট দল সানসেইতো-এর চমকপ্রদ উত্থান। দলটি এবারই প্রথমবার মূলধারার রাজনীতিতে প্রবেশ করে ১৪টি আসনে জয়লাভ করেছে। এর আগে দলটির মাত্র একটি আসন ছিল।
মুদ্রাস্ফীতি ও স্থবির অর্থনীতিতে ক্ষুব্ধ জনগণের সমর্থন পেয়ে সানসেইতো ব্যাপক সাড়া ফেলে। অভিবাসন-বিরোধী বক্তব্য, কর কমানো ও সামাজিক নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে তারা জনগণের মন জয় করে। দলটির নেতা সোহেই কামিয়া এক সময় ইংরেজি শিক্ষক ও সুপারমার্কেট ম্যানেজার ছিলেন। তিনি বিভিন্ন বিতর্কিত ষড়যন্ত্র তত্ত্ব এবং “গ্লোবাল এলিট” বিরোধী বক্তব্য দিয়ে পরিচিতি পান।
তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের “সাহসী রাজনৈতিক কৌশল” থেকে অনুপ্রাণিত বলে জানিয়েছেন। নির্বাচনের পর নিপ্পন টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কামিয়া বলেন, “‘জাপানিজ ফার্স্ট’ স্লোগানটির মাধ্যমে আমি বলতে চেয়েছি—জাপানি জনগণের জীবনমান পুনর্গঠন করতে হবে গ্লোবালিজমের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে। আমি বলছি না যে সকল বিদেশিকে নিষিদ্ধ করতে হবে বা দেশ ছাড়তে হবে।”

তবে, দলটি অভিবাসনবিরোধী বক্তব্য ও “নীরব আগ্রাসন”-এর মতো শব্দচয়নের কারণে জোরালো সমালোচনার মুখে পড়েছে। তবুও বিশ্লেষকরা বলছেন, স্থবির অর্থনীতি, দুর্বল ইয়েন এবং মূল্যস্ফীতির কারণে জাপানি জনগণের এক অংশের মধ্যে এই জাতীয়তাবাদী বার্তা বেশ প্রভাব ফেলেছে।
বর্তমানে জাপানে বিদেশি বাসিন্দার সংখ্যা ৩.৮ মিলিয়নে পৌঁছেছে, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ। যদিও অভিবাসন ইস্যুটি এখনো প্রধান উদ্বেগ নয়, এনএইচকে’র এক নির্বাচনী জরিপে দেখা গেছে মাত্র ৭ শতাংশ ভোটার এটি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বরং জন্মহার কমে যাওয়া এবং খাদ্যের দাম—বিশেষ করে চালের দাম দ্বিগুণ হওয়াই জনগণের মূল দুশ্চিন্তার কারণ।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জাপান সোসাইটির সভাপতি জোশুয়া ওয়াকার বলেন, “সানসেইতোকে ঘিরে আলোড়ন মূলত এলডিপির দুর্বলতা এবং অভ্যন্তরীণ অসন্তোষের প্রতিফলন। যদিও দলটির বার্তা অনেকটা ইউরোপের ডানপন্থী দলগুলোর মতো।”
জাপানে ইউরোপের মত চরম ডানপন্থী রাজনীতি আগে খুব একটা জনপ্রিয়তা পায়নি। সানসেইতো’র উত্থান তাই দেশটির রাজনীতিতে একটি নতুন প্রবণতার সূচনা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।