ইসরায়েলি হামলার পর সিরিয়ার সুইদা থেকে সেনা প্রত্যাহার

সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে বুধবার (১৬ জুলাই) একাধিক শক্তিশালী বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। দেশটি দাবি করেছে, সরকারবিরোধী সংঘর্ষে জড়িত একটি আরব সংখ্যালঘু গোষ্ঠীকে সমর্থন দিতেই এ হামলা চালানো হয়েছে।
সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এসব হামলায় অন্তত ৩ জন নিহত ও আরও ৩৪ জন আহত হয়েছেন।
দামেস্কে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারি ভবন লক্ষ্য করে হামলাগুলোকে “গুরুতর উসকানি” হিসেবে বর্ণনা করেছে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। একটি টিভি সম্প্রচারে দেখা যায়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে সরাসরি হামলার সময় উপস্থাপক আশ্রয় নিচ্ছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, “এটি একটি পরিকল্পিত নীতির অংশ, যার মাধ্যমে ইসরায়েল সিরিয়ায় অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা ছড়াতে চাইছে।”
এ হামলার জবাবে সিরিয়া বলেছে, “নিজেদের ভূমি ও জনগণকে রক্ষায় আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার অধিকার সংরক্ষণ করে দেশটি।”
এদিকে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, বুধবার রাতে সুইদা শহর থেকে সেনা প্রত্যাহার শুরু করেছে দেশটির সেনাবাহিনী। সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, “অবৈধ গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান শেষ হওয়ায়” এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সিরিয়ায় বসবাসরত দ্রুজ সম্প্রদায়ের সঙ্গে সরকারের সংঘাতের পর এই সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা আসে। কয়েকদিন ধরে চলা সংঘর্ষে সিরিয়ার মানবাধিকার সংস্থা (এসএনএইচআর) জানিয়েছে, সংঘর্ষে অন্তত ১৬৯ জন নিহত ও ২০০ জন আহত হয়েছে।
সংঘাত চলাকালে ইসরায়েলও বিমান হামলা চালিয়েছে সুইদা, দারা ও দামেস্কে। এসব হামলাকে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস “সিরিয়ার সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন” হিসেবে অভিহিত করে অবিলম্বে থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
সিরিয়া সরকার জানিয়েছে, দ্রুজ নেতাদের সঙ্গে একটি নতুন যুদ্ধবিরতির চুক্তি হয়েছে, যার আওতায় সেনাবাহিনী ব্যারাকে ফিরে যাবে এবং প্রদেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দ্রুজ সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে একটি তদারকি কমিটি গঠিত হবে।
তবে দ্রুজ সম্প্রদায়ের অন্যতম নেতা হিকমাত আল-হিজরি এই যুদ্ধবিরতি প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তার অনুসারীদের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছে তুরস্ক, ইরান, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ। তারা একে “আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন” বলে উল্লেখ করেছে।
ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট আন্তোনিও কস্তা এবং নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এসপেন বার্থ এইডেও হামলার নিন্দা জানিয়ে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব রক্ষার আহ্বান জানান।
দ্রুজরা মূলত সিরিয়া, লেবানন ও ইসরায়েলে বসবাসকারী একটি আরব সম্প্রদায়, যারা ইসলামের একটি বিশেষ মতবাদ অনুসরণ করে। তারা ধর্মান্তর বা আন্তধর্মীয় বিবাহের অনুমতি দেয় না।
সিরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারআ সব ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্তি ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলেও, তার প্রতি আনুগত্যশীল সুন্নি চরমপন্থীরা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত সপ্তাহান্তে সুইদা শহরে দ্রুজ ও বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হলে সিরিয়া সরকার সেখানে হস্তক্ষেপ করে।

গোলান মালভূমির দ্রুজদের মধ্যে শত শত মানুষ সম্প্রতি সীমান্ত পেরিয়ে সিরিয়ায় প্রবেশ করেছে বলে ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, তারা সিরিয়ায় দ্রুজ সম্প্রদায়ের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু ইসরায়েল ও গোলান মালভূমির দ্রুজদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তারা সীমান্ত অতিক্রম না করে।
তিনি বলেন, “আপনারা ইসরায়েলের নাগরিক। আমার একটাই অনুরোধ—সীমান্ত পার হবেন না।”