লস অ্যাঞ্জেলেসে সেনা মোতায়েন নিয়ে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বাড়ছে

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার নিজ দেশের মাটিতে সেনাবাহিনী নামানোর রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক ভিত্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করছেন। ‘সীমান্ত সুরক্ষা’ আর ‘আইন-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার’ অজুহাতে তিনি মূলত অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিকে যুদ্ধাবস্থার মতো দেখাতে চাইছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম সতর্ক করেছেন— “আমরা বহুদিন ধরে যে মুহূর্তটির ভয় পেয়ে এসেছি, সেটিই এখন সামনে এসেছে।” খবর সিএনএনের।
ট্রাম্প সম্প্রতি একাধিকবার দাবি করেছেন, লস অ্যাঞ্জেলেসে তিনি যদি ন্যাশনাল গার্ড এবং মার্কিন সেনা না পাঠাতেন, “শহরটি আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যেত।” যদিও বাস্তবে শহরের কিছু অংশে বিক্ষোভ, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটেছে—তবে সেটিকে তিনি “বিদ্রোহ” বলে আখ্যা দিয়ে সেনা মোতায়েনের ব্যাখ্যা দিচ্ছেন।
ফোর্ট ব্র্যাগ-এ সেনাবাহিনীর ২৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “আমরা লস অ্যাঞ্জেলেসকে মুক্ত করব। দেশের প্রতিটি শহরে, যেখানে অপরাধীরা দাপট দেখাচ্ছে, আমরা শক্ত হাতে দমন করব।”
‘দেশজুড়ে সেনা’—ট্রাম্পের বার্তা
স্থানীয় সময় সোমবার (৯ জুন) হোয়াইট হাউসে এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেছিলেন, “লস অ্যাঞ্জেলেস শুধু শুরু। আমরা শিগগিরই দেশের সর্বত্র সেনা মোতায়েন করব।”
এই বক্তব্যের একদিন পর, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি জানিয়েছে, সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোম প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছিলেন যেন সেনা মোতায়েন করে বিক্ষোভকারীদের গ্রেফতার করা হয়। যদিও পরে তারা জানায়, সেই চিঠি ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের আগেই লেখা হয়েছিল।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর নিউসাম পাল্টা বিবৃতিতে বলেন, “আমেরিকার গণতন্ত্র আজ সরাসরি আক্রমণের মুখে। আমাদের সংবিধানের তিনটি স্বতন্ত্র শক্তিকে ট্রাম্প এখন নিজের ইচ্ছেমতো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন।”
অভ্যন্তরীণ ‘শত্রু’ খুঁজে বাহিনী নামানোর পাঁয়তারা
বিশ্লেষকদের মতে, এটি নতুন কোনো কৌশল নয়। একনায়কতান্ত্রিক মনোভাবের নেতারা প্রায়শই ‘অভ্যন্তরীণ শত্রু’ তৈরি করে সেনা মোতায়েনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করে থাকেন।
লস অ্যাঞ্জেলেসের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলেই স্থানীয় প্রশাসনের দাবি। কিন্তু ট্রাম্পের ভাষায়, শহরটি যেন “আন্তর্জাতিক অপরাধচক্রের দখলে”। এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ‘ইনসারেকশন অ্যাক্ট’-এর মতো আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার ভূমিকা তৈরি করছেন—যার মাধ্যমে সেনাবাহিনীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতো ব্যবহার করা যায়।
লস অ্যাঞ্জেলেসের মেয়র ক্যারেন ব্যাস বলেছেন, “আমরা যেন একটি পরীক্ষা কেন্দ্র। যদি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহরে এমনটা করা যায়, তাহলে গোটা দেশেই ভয়ের পরিবেশ তৈরি হবে।”
গণতন্ত্রের জন্য হুমকি?
ক্যালিফোর্নিয়ার সিনেটর অ্যাডাম শিফ ও অ্যালেক্স পাদিলিয়া সেনা মোতায়েনকে “অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক” বলে চিঠি দিয়েছেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ ও নৌবাহিনীর সচিব জন ফেলানকে।
এমনকি রিপাবলিকান সিনেটর সুসান কলিন্সও বলেন, “সাধারণত সেনাবাহিনীকে দেশের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যবহার করা হয় না।”
তবে ট্রাম্পের কৌশলে মুগ্ধ তার অনুগামীরা। হেগসেথ কংগ্রেসে বলেন, “আইস এজেন্টরা তাদের কাজ করতে পারছে না—অপরাধী অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোই তাদের দায়িত্ব। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইন-শৃঙ্খলার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

‘আমেরিকান পতাকাই বিজয়ী পতাকা’
ফোর্ট ব্র্যাগ-এ সেনাদের উদ্দেশে ট্রাম্প বলেন, “আমার ঈশ্বর সাক্ষী থাকুন, লস অ্যাঞ্জেলেসের রাস্তায় কেবল আমেরিকার পতাকাই বিজয়ী হয়ে উড়বে।”
তবে এখনও পর্যন্ত সেনারা সরাসরি বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি হয়নি। তারা কেবল কিছু ফেডারেল ভবনের নিরাপত্তা দিচ্ছে। তবু এই পুরো অভিযানের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩৪ মিলিয়ন ডলার।
সংবিধানের বাইরে গিয়ে শক্তি প্রয়োগ না করলেও, অতীত অভিজ্ঞতা বলে দেয়—ট্রাম্প যা বলেন, প্রায়ই তা বাস্তবায়নেও এগিয়ে যান। ২০২০ সালের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে যে মিথ্যা প্রচারণা তিনি চালিয়েছিলেন, তার পরিণতিতে ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল হিলে নজিরবিহীন হামলা ঘটে।