বোকাদেরকে কেন গাধা বলা হয়?

আজ বিশ্ব গাধা দিবস। গাধার গুরুত্ব এবং তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জনসাধারণকে বোঝানোর জন্য দিনটি পালিত হয়। সাধারণত কোনো বোকা লোক দেখলেই তাকে আমরা গাধা বলে থাকি। তবে আসলেই গাধা কি এতটাই বোকা? গবেষণা বলছে, অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে গাধা বেশি বুদ্ধিমান। সে স্বতন্ত্র স্মৃতি ও প্রখর বুদ্ধি দিয়ে ক্ষতিকর বিষয় থেকে অন্যান্য প্রাণীদের রক্ষা করে। তারপরও বোকাদের গাধা বলা হয়।
অনেক ক্ষেত্রে অনেক কিছু প্রশ্নের উত্তর তাদের কাছে থাকেও না। তাদের বোকা বলেন অনেকে। অনেকে এদের গাধাও বলেন। অর্থাৎ তারা আর পাঁচজনের মতো চালাক-চতুর নন বলেই তাদের গাধা বলে সম্বোধন করা হয়।
গাধা, একটি পরিচিত গৃহপালিত প্রাণী, বিশেষ করে কৃষিকাজে ব্যবহৃত হয়। এটি প্রাচীন মিশর এবং মেসোপটেমিয়া সভ্যতার সময় থেকেই মানুষের সঙ্গে বসবাস করে আসছে। এই প্রাণী তার ধৈর্যশীলতা, শারীরিক সক্ষমতা এবং ভারবাহী শক্তির জন্য বিখ্যাত। কিন্তু, গাধার আরেকটি দিকও আছে, যেটি তাকে ধীরে ধীরে ‘বোকামির প্রতীক’ হিসেবে তুলে ধরেছে।
১. গাধার কিছু আচরণ তাকে বোকা হিসেবে পরিচিত করেছে। গাধা সাধারণত ধীরগতির প্রাণী। অন্যদিকে, এটি চরম বিরক্তি এবং ধীর প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারে। গাধা সহজেই ভয় পায় এবং অনেক ক্ষেত্রে আতঙ্কিত হয়ে হঠাৎ থেমে যায় বা অস্থির হয়। এই আচরণকে প্রাচীনকাল থেকে মানুষ ‘বোকামি’ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে।
২. গাধার বোকামির আরেকটি প্রাচীন ধারণা এসেছে তার ব্যবহারিক জীবন থেকে। এটি সাধারণত অন্যান্য প্রাণীর চেয়ে কম স্মার্ট এবং কম সামাজিক বলে বিবেচিত। বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে যেমন ঘোড়া দ্রুতগতিসম্পন্ন এবং নির্ভীক প্রাণী হিসেবে পরিচিত, ঠিক তেমনই গাধা তার ভীতু ও ধীরগতি জীবনযাত্রার জন্য পরিচিত। তাই মানুষ দীর্ঘদিন ধরে গাধার এই গুণাবলিকে বোকামির প্রতীক হিসেবে দেখে আসছে।
৩. গাধাকে বোকা হিসেবে ব্যবহারের আরো উদাহরণ পাওয়া যায় সাহিত্য এবং ভাষার বিভিন্ন রূপে। প্রাচীন গ্রিক এবং রোমান সাহিত্যে গাধাকে উপহাসের প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হত। উইলিয়াম শেক্সপিয়ারের নাটকেও গাধাকে বোকা বা মূর্খ মানুষের সাথে তুলনা করা হয়েছে।
৪. গাধাকে নিয়ে মানুষের এই ভাবনা শুধু পশ্চিমা সংস্কৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। ভারতীয় উপমহাদেশেও এই ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলায় আমরা গাধাকে ‘বোকা’ বলার পেছনে অনেক সময় শুনতে পাই “গাধার মতো খাটে কিন্তু বুদ্ধি নেই।” অর্থাৎ, গাধা অনেক পরিশ্রম করে, কিন্তু তার কাজের মধ্যে বুদ্ধির কোনো প্রতিফলন নেই।
গাধা প্রকৃতপক্ষে একটি অত্যন্ত বুদ্ধিমান প্রাণী। এরা নিরাপত্তার জন্য নিজের শরীর এবং পরিবেশকে ভালোভাবে বোঝে। তবে এদের প্রাথমিক দায়িত্ব হলো শ্রম দেওয়া, যে কারণে অনেক সময় এদের প্রতিক্রিয়া ধীর মনে হতে পারে। কিন্তু এটাই গাধার প্রকৃত স্বভাব এবং কোনোভাবেই বোকামির পরিচায়ক নয়। তাহলে, বোকা মানুষকে ‘গাধা’ বলার পেছনে আসলে রয়েছে পুরনো ভুল ধারণা এবং উপমা। গাধার ধৈর্যশীলতা এবং ধীর প্রতিক্রিয়াশীলতাকে মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করেছে। আর এই ভুল ব্যাখ্যাই ক্রমে ক্রমে বোকামির প্রতীক হয়ে উঠেছে। তবে বাস্তবে গাধা একটি অত্যন্ত সহনশীল, পরিশ্রমী, এবং দায়িত্বশীল প্রাণী।