খাবার মুখে দিতেই আছড়ে পড়ে বিমান, পড়ে আছে টিফিন পেন্সিল বক্স
ঘড়ির কাটায় তখন দুপুর প্রায় সোয়া ১টা। রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের কেউ ক্লাস করেছিল, কেউ মনোযোগ দিয়ে স্যার-ম্যাম বা ব্যাচমেটের কথা শুনছিল। কেউ বা আবার কেউ ছুটি শেষে বাসায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আর শিক্ষার্থীদের জন্যে অপেক্ষা করছিলেন অভিভাবকরা।
সময়টা যেহেতু দুপুর, কেউ কেউ হয়তো খেতে বসেছে, কেউ হয়তো একটু বিশ্রাম নিচ্ছে। ঠিক সে সময় বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান আছড়ে পড়ে সেখানে। বিকট শব্দে মুহূর্তেই সব কিছু স্তব্ধ হয়ে যায়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে আগুনের লেলিহান শিখা, দিগ্বিদিক ছুটতে থাকে শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ধোঁয়া আর চিৎকারের শব্দে ভারী হয়ে ওঠে আকাশ-বাতাস।
গতকাল সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ঘটনা এটি। যে ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জন দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহত শতাধিক।

আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিমান আছড়েপড়া ভবনটির ভেতরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা মিলে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খাবারসহ টিফিন বক্স, পেন্সিল বক্স, বইভর্তি ব্যাগ, পানির বোতল, ছেঁড়া ও পোড়া জুতা।
তবে ধ্বংসস্তূপের ভেতরে হঠাৎ চোখ আটকে যায় একটি টিফিন বক্সে। ওই টিফিন বক্সের চামচে এখনও লেগে আছে কয়েকটি ভাত। কয়েক চামচ ভাত খাওয়া হয়েছে। বক্সের ভেতরে এখনো চিকেন পিসটা ঠিক সেভাবেই রয়েছে, যেভাবে বাসা থেকে আনা হয়েছে।

তবে এই টিপিন বক্স কার— শিক্ষক, শিক্ষার্থী নাকি অন্য কারও তা বলা না গেলেও খাওয়া অংশটুকু দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় বিমান দুর্ঘটনার ঠিক আগ মুহূর্তে কেউ একজন খেতে বসেছিল। হয়তো মুখে চামুচ তুলতেই বিমানবাহিনীর এফটি-৭বিজিআই যুদ্ধবিমান স্কুলটির ওই দোতলা ভবনে আছড়ে পড়ে।
এমন আরও একটি দৃশ্য দেখা যায় দোতলা ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায়। যেখানে একটি কক্ষে (সম্ভবত শিক্ষকদের কক্ষ) একটি প্লেটে এখনও পড়ে আছে ভাত ও সামান্য তরকারি। পাশেই আরেকটি বক্সে তরকারি রাখা। ভাতের লোকমা মুখে তোলার আগেই এমন ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে, শেষ পর্যন্ত খাওয়া হয়নি ভাত টুকুও।

হৃদয়বিদারক এমন দৃশ্য বিধ্বস্ত ভবনটির প্রতিটি কক্ষেই। কোথাও পড়ে আছে ঝলসানো রুটি, ছাই হওয়া ছাতা, পানির বোতল, ভাঙ্গা চশমা। আর কোথাও পড়ে আছে শিক্ষার্থীদের অসংখ্য ব্যাগ ও জুতো।