বাংলাদেশি পণ্যে শুল্ক কমাতে পারে যুক্তরাষ্ট্র : অর্থ উপদেষ্টা
যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা বাংলাদেশি পণ্যে দেশটি শুল্কহার কমাতে পারে বলে আশাবাদ প্রকাশ করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এ বিষয়ে আলোচনা করতে বাণিজ্য উপদেষ্টাসহ একটি প্রতিনিধিদল আগামী ১ আগস্টের আগেই যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।
বুধবার (২৩ জুলাই) সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘শুল্কহার কমানোর বিষয়ে আমরা আশাবাদী। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি খুব কম, প্রায় সাড়ে ৬০০ থেকে ৭০০ কোটি মার্কিন ডলার।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পণ্য আমদানির পরিকল্পনার কথা জানিয়ে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা কিছু জরুরি পণ্য আমদানি করব, তবে এখনই সেগুলোর নাম বলতে চাচ্ছি না।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির সিদ্ধান্ত সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা গম আমদানিকে ডাইভার্সিফাই (বৈচিত্র্যময়) করতে চাচ্ছি। কৃষ্ণসাগর ঘিরে সমস্যা তৈরি হওয়ায় রাশিয়া-ইউক্রেন অঞ্চল থেকে আমদানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।’
গমের দাম সম্পর্কে মন্তব্য অস্বীকৃতি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দাম কিছুটা বেশি হলেও যুক্তরাষ্ট্রের গমে প্রোটিনের মাত্রা সামান্য বেশি এবং পরিষ্কার।’
যুক্তরাষ্ট্র থেকে বেশি দামে গম আমদানির বিষয়টি স্বীকার করে উপদেষ্টা বলেন, ‘এতে আমরা কিছু সুবিধা পাবো এবং আলোচনা এগিয়ে নিতে কিছু আমদানি করতেই হবে।’ এই আমদানি বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি কমাতেও সহায়তা করবে বলে জানান তিনি।
অর্থ উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশি পণ্যে শুল্কহার বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার আগে এ বিষয়ে আলোচনা করতে বাণিজ্য উপদেষ্টা যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন এবং ইউএসটিআরের (যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি) সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি বলেন, ‘আমি নিজেও আমার চ্যানেলের মাধ্যমে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছি।’
এ পর্যায়ে লবিস্ট নিয়োগ কোনো ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে না উল্লেখ করে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘লম্বা সময় নিয়ে কোনো আলোচনার ক্ষেত্রে এ ধরনের লবিস্ট নিয়োগ করা হয়। এখানে যা করতে হবে দ্রুত (কুইক) করতে হবে।’
ব্যবসায়ীদের আলোচনায় যুক্ত করার প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও এডিবিতে নেগোশিয়েট করে এসেছি। ব্যবসায়ীরা তো আলোচনা দূরে থাক, গেট পর্যন্তও ঢুকতে পারবে না, পরে বাইরে হইচই করবে। ওই হইচইয়ে কাজ হবে না।’
তবে যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বীকার করে ইতোমধ্যে ইউএস চেম্বারের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন বলে জানান উপদেষ্টা।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের ভালো ইমেজ আছে। সম্প্রতি আমরা যুক্তরাষ্ট্রের শেভরন, এক্সিলারেট এনার্জি, মেটলাইফের কতগুলো বকেয়া পরিশোধ করে দিয়েছি। বাংলাদেশের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করে ইউএস চেম্বার চিঠি লিখেছে।
গত ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে বাংলাদেশের পণ্যে ৩৫ শতাংশ শুল্কারোপের ঘোষণা দেন।
চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী ও স্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতির কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে বাংলাদেশের একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য অংশগ্রহণ চাই।’
তিন মাস আগে ঘোষিত শুল্ক হার থেকে ২ শতাংশ কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করা হলেও এই হার বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক বেশি।
ভিয়েতনাম সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি করেছে যার আওতায়, তারা ২০ শতাংশ শুল্কে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে।