সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রবাসীদের ভোটের চেষ্টায় ইসি, বসবে অংশীজনদের সঙ্গে

প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনার চেষ্টা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অন্তর্বর্তী সরকারও চায় প্রবাসীদের ভোটের ব্যবস্থা করতে। সে জন্য গত ৮ এপ্রিল এক কর্মশালায় কারিগরি বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয় ইসি। বিশেষজ্ঞরা তিনটি সম্ভ্যব্য পদ্ধতির পক্ষে মতামত দেন। পদ্ধতি তিনটি হলো— পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ভোটিং ও প্রক্সি ভোটিং।
কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এ তিনটি পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধা তুলে ধরেন। পরদিন নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ গণমাধ্যমে বলেছিলেন, চূড়ান্ত পদ্ধতি নির্ধারণে প্রযুক্তিবিদদের নিয়ে একটি ‘অ্যাডভাইজারি টিম’ থাকবে। তিনটি পদ্ধতিরই সুবিধা-অসুবিধা রয়েছে। অ্যাডভাইজারি টিম চেষ্টা করবে কীভাবে দুর্বলতা কমিয়ে আনা যাবে। এরপর নির্বাচন কমিশন অংশীজনদের সঙ্গে বসবে।
ভোট পদ্ধতির সম্ভাব্যতা নিরূপণ, উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ১২ সদস্যের এই অ্যাডভাইজরি টিম করেছে ইসি সচিবালয়। অ্যাডভাইজরি টিম তিন পদ্ধতির বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট, মিলিটারি ইন্সটিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) বিশেষজ্ঞরা গত রোববার ও সোমবার তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। এ প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করছে ইসি।
ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, প্রতিবেদনে তিনটি পদ্ধতিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটগ্রহণের ক্ষেত্রে কী কী করতে হতে পারে, কী সমস্যা হতে পারে এবং কী ধরনের সীমাদ্ধতা রয়েছে সে বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। আমরা প্রতিবেদন তিনটি ভালোভাবে পর্যালোচনা করব। পরবর্তী সময়ে পদক্ষেপ নেবে কমিশন। তবে আগামী ২৯ ও ৩০ এপ্রিল এ বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে বসবে ইসি।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। দ্রুতই আরেকটি প্রতিবেদন জমা দেব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল ও এমআইএসটি আরও দুটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এসব প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করবে ইসি। তারা যদি মনে করে আমাদের প্রতিবেদনের বিষয়ে আরও বসা দরকার, আমরা বসব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা আমাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছি ইসিতে। তিন পদ্ধতির কী সুবিধা ও অসুবিধা বা সীমাবদ্ধতা রয়েছে, তা আমরা তুলে ধরেছি।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেছেন, তিনটি পদ্ধতিরই সীমাবদ্ধতা রয়েছে। তারপরও কেন এ পদ্ধতির দিকে এগোচ্ছে ইসি— এমন প্রশ্নে অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে, আমরা প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনতে চাই কিনা। যদি চাই, তাহলে এ তিন পদ্ধতির মধ্যে যেটা বেশি ভালো, সেদিকে এগোতে হবে। তবে এ প্রক্রিয়া অনেক কঠিন। সে জন্যই আমরা কাজ করছি। বৃহৎ পরিসরে না হলেও স্বল্প পরিসরে এ প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি।
ধরা যাক, কোনো একটি বা একাধিক পদ্ধতিতে ভোট শুরু হলো। ভোটের দিন যদি অসুবিধা ধরা পড়ে, তাহলে তো পুরো নির্বাচন/ভোটই স্থগিত করার প্রয়োজন পড়তে পারে, তখন কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে কে এম আলী নেওয়াজ বলেন, সবকিছু মাথায় রেখে আমরা সামনের দিকে এগাব। সম্ভ্যতা যাচাই করা হবে। মক ভোট করা হবে। সামনে এখনও অনেক কাজ। তারপরও দূতাবাসের মাধ্যমে কতজন ভোটার শেষ পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন, তা হিসাব করার বিষয় রয়েছে। সামগ্রিক প্রক্রিয়া যদি অনেক জটিল হয়ে ওঠে, তখন ভাবা যাবে সামনে কী করা হবে।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, আগামী ২৮ ও ২৯ এপ্রিল অংশীজনদের সঙ্গে প্রবাসী ভোটারদের নিয়ে সংলাপে হবে। যেখানে প্রায় ৪০০ অংশীজনের সঙ্গে এ সংলাপ হবে। সংলাপে নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত অর্ধশত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি, নির্বাচন ব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রধান, গণমাধ্যম প্রতিনিধি, পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ, সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, নির্বাচন কমিশন বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠনসহ নির্বাচন বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা প্রথম তার ভাষণে প্রবাসীদের ভোটের অধিকার দেওয়ার কথা বলেছেন। এজন্য নির্বাচন কমিশনও এই প্রত্যাশা ধারণ করে। আমরা ১৭৮টি দেশ নিয়ে স্টাডি করে দেখেছি, ১১৫টি দেশ তাদের প্রবাসী নাগরিকদের জন্য ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রেখেছে। সবচেয়ে অনুসৃত পদ্ধতি হচ্ছে দূতাবাসে, এরপর হচ্ছে পোস্টাল ব্যালট, এরপর হচ্ছে অনলাইন বা প্রক্সি ভোটিং। বাংলাদেশের প্রবাসীদের যে বিস্তৃতি তাতে দূতাবাসে সেটা সীমিত। এজন্য তিনটিকে শর্ট লিস্ট করেছি। পোস্টাল ব্যালট, অনলাইন ও প্রক্সি ভোটিং। তিনটিরই কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, কিছু সুবিধাও আছে।
অনলাইন ভোট এখনও জনপ্রিয় হতে পারেনি জানিয়ে আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, অনেক দেশ চার-পাঁচ বছর ধরে করছে। প্রক্সি ভোটকে আমরা বলেছি, যদি সর্বোচ্চ ভোটারকে আনতে চাই তাহলে প্রক্সি একমাত্র অপশন। এখনও কমিশনের অবস্থান একই আছে। প্রক্সি ভোটের দুর্বলতা অনেকে তুলে ধরেছেন। সফলতাও তুলে ধরেছেন। অন্যগুলোর ক্ষেত্রেও তাই। কোনো অপশনকেই আমরা সিঙ্গেল আউট করছি না। বাংলাদেশের জন্য কোনো একটি সিঙ্গেল অপশন অ্যাপ্লিকেবল না। কমবাইন্ড অপশনের দিকে যেতে হবে। তিনটা পদ্ধতিকে যদি আনা যায়, তাহলে আমরা তিনটা পদ্ধতিকেই আনব। পোস্টাল ব্যালটে সময় লাগে বেশি। এটারও কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
সানাউল্লাহ বলেন, প্রবাসীদের ভোট দিতে হলে আগে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধন অংশটা অনলাইন হবে। এখন প্রবাসী যে দেশে থেকে ভোট দিতে চান, সেই দেশে ওই পদ্ধতি কার্যকর কি না সেটা দেখতে হবে। অনলাইন ভোটিংয়ে যেতে হলে সময় আরও বেশি লাগবে। আমরা যদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোট দেওয়ার আওতায় আনতে চাই তাহলে কোনো না কোনো পদ্ধতিতে আনতে হবে। সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও।