আমাদের গ্রাম
গ্রামের নাম সিদ্ধিনগর

পাবনার চাটমোহর উপজেলার সিদ্ধিনগর গ্রাম এক টুকরো শান্তির নাম। হান্ডিয়াল ইউনিয়নের এই গ্রামটি যেন কোলাহলহীন এক গ্রামীণ কাব্য। যেখানে প্রকৃতি, মানুষ আর সময় একসঙ্গে বেঁধেছে আত্মার বন্ধনে। তবে এই গ্রামের পূর্ব নাম ছিল দুর্গাচরণ। বর্তমানে এটি পরিচিত সিদ্ধিনগর নামে।
চলনবিলের এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই গ্রাম। আর এই নামের পেছনে রয়েছে এই বটগাছের গভীর এক সম্পর্ক। গ্রামের প্রতিটি পুরোনো বটগাছ যেন একেকটি জীবন্ত ইতিহাসের সাক্ষী। এই বিশাল বটবৃক্ষ ঘিরে রয়েছে এক চমকপ্রদ রহস্য, যা শুনলে যে আপনাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য হবে।
প্রায় তিনশ বছর আগে, এই গ্রামে খন্দকার বংশের দাপট ছিল সর্বাধিক। সেই বংশের প্রধান, যাঁর নাম ইতিহাসের পাতায় আজও সম্মানের সঙ্গে উচ্চারিত হয় (নাম অজানা রয়ে গেছে), ছিলেন এক অসাধারণ দিব্য শক্তির অধিকারী। তাঁর দীক্ষার সামনে যেকোনো অপশক্তি নিস্তেজ হয়ে পড়ত। তবে তাঁরও একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, যার সঙ্গে তিনি দিব্য শক্তির নানা রকম প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতেন। গ্রামের লোকজন এই অদ্ভুত প্রতিযোগিতাকে খুব উপভোগ করত।
সময়টা ছিল বর্ষার শুরু, আমন ধান বপনের মৌসুম। খন্দকার সাহেব তাঁর রাখালদের নির্দেশ দেন জমিতে ধান বপনের জন্য। নিয়ম অনুযায়ী, জমির পাশে দুটি আলাদা বেরি রাখা হতো — একটিতে সিদ্ধ ধান, আরেকটিতে বপনযোগ্য কাঁচা ধান।
কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বীর ষড়যন্ত্রে বাড়ির বড় রাখাল ভুল করে সিদ্ধ ধান জমিতে বুনে আসে। ঘটনা জানার পর খন্দকার সাহেব প্রথমে গোসল করেন, তারপর এক গ্লাস দুধ পান করে এই বটগাছের নিচে ধ্যানমগ্ন হয়ে বসেন।
টানা সাতদিন সাতরাত তিনি ধ্যানমগ্ন থাকেন। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সপ্তম দিন সকালে দেখা যায় — সিদ্ধ ধানের মধ্য থেকে অলৌকিকভাবে চারা গজিয়ে উঠেছে! এই অলৌকিক ঘটনাকে কেন্দ্র করেই গ্রামের নতুন নামকরণ হয় সিদ্ধিনগর।
কিছুদিন আগে ২০০৬ সালের দিকে এই বটগাছের শিকর থেকে পানি পরা সুরু হয়। গ্রামের লোকজন তো বটেই, দূর-দুরান্ত থেকে লোকজন এসে এই পানি সংগ্রহ করে নিয়ে যেত। অনেকের নাকি এই পানি খেয়ে দুরারোগ্য নিরাময় হয়েছে। এই উপলক্ষে এইখানে জলসার আয়োজন করা হয়েছিল।
এরপর আর এই গাছ থেকে আর এমন ঘটনা ঘটেনি। তবে অনেকেই রাতের বেলা এই বট গাছের নিচে দিয়ে যেতে সাহস করে না। আজও সেই কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই রহস্যময় বটবৃক্ষ।
যেভাবে যেতে পারেন
ঢাকা থেকে বাস অথবা ট্রেন যোগে সিরাজগঞ্জ অথবা চাটমোহর হয়ে সহজেই আসতে পারবেন এই গ্রামে। পাশেই রয়েছে, শীতলাই জমিদার বাড়ি যা জমিদার যোগেন্দ্রনাথ মৈত্রয় প্রায় ১৯০০ শতকের প্রথম দিকে এই জমিদার বাড়িটি নির্মাণ করেন। সমাজ শাহী মসজিদ, যা প্রায় সাড়ে ৪‘শ বছর আগে ১৫৪৯ সালে তৎকালীন দিল্লীর শাসক শেরশাহের পুত্র সুলতান সেলিম মসজিদটি নির্মাণ করেন। জগন্নাথ মন্দির, হান্ডিয়াল যা ১৫ শতকের শুরুর দিকে নির্মাণ করা হয়েছিল, হযরত শাহ শরীফ জিন্দানী (রা.) এর মাজার, নওগাঁ। রাতযাপন করার জন্য আপনাকে যেতে হবে সিরাজগঞ্জ অথবা পাবনা।