বায়ু দূষণে বাড়ছে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি, বলছে গবেষণা

বায়ুদূষণের ভয়াবহতা জানা সত্ত্বেও আমরা হরহামেশাই দূষিত করছি পরিবেশ। আর পরিবেশ দূষণ ব্রেইন টিউমারের ঝুঁকি বিপজ্জনকভাবে বাড়াচ্ছে। বায়ুতে থাকা বিষাক্ত কণা, শিল্প-কারখানা থেকে নির্গত রাসায়নিক পদার্থ এবং অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানের সংস্পর্শ মস্তিষ্কের কোষের অস্বাভাবিক পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এর ফলে ব্রেইন টিউমার হওয়ার আশঙ্কা দিন দিন বেড়েই চলেছে। আধুনিক জীবনযাত্রায় এটি একটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয় হয়ে উঠেছে।
অতিরিক্ত বায়ু দূষণে এ পর্যন্ত বহু মানুষই ব্রঙ্কাইটিস, এম্ফিসিমা, অ্যাজমা, সিওপিডি, ফুসফুসের ক্যানসারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। সাম্প্রতিক একটি গবেষণা বলছে, দূষণের জেরে মগজেও টিউমার তৈরি হতে পারে। ভীতি জাগানো এই তথ্যটি তুলে ধরেছে আমেরিকার অ্যাকাডেমি অফ নিউরোলজি মেডিকেল জার্নাল। খবর : ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি
গবেষণায় বলা হচ্ছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে তীব্র বায়ু দূষণের সংস্পর্শে রয়েছেন, তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্রেন টিউমার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ধরনের টিউমারকে বলা হয় মেনিনজিওমা। এই টিউমারের উৎপত্তি ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ডকে ঘিরে থাকা আবরণি কলা মেনিনজেস নামক এক ঝিল্লি। এটি খুব সাধারণ ধরনের একটি ব্রেন টিউমার। ধীর গতিতে এই টিউমার বেড়ে ওঠে। ফলে, রোগ শনাক্ত করা অনেক ক্ষেত্রেই খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। তবে আশার কথা, গবেষকরা জানাচ্ছেন, এই টিউমার থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা প্রায় নেই বললেই চলে।

সম্প্রতি ডেনমার্কে এই গবেষণাটি চালানো হয়। ৪০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ওপর ২১ বছর ধরে এই গবেষণা চলে। উক্ত সময়সীমার মধ্যে ১৬ হাজার ৫৯৬ জনের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমে টিউমার ধরা পড়ে। যার মধ্যে ৪ হাজার ৬৪৫ জন মানুষ মেনিনজিওমাতে আক্রান্ত ছিলেন।
গবেষকরা ১০ বছরের কেস স্টাডি করে দেখেন, যারা দীর্ঘ সময় ধরে তীব্র বায়ু দূষণের সংস্পর্শে ছিলেন একমাত্র তারাই মেনিনজিওমায় আক্রান্ত হয়েছেন।
এই গবেষণায় সরাসরি বায়ু দূষণকে মেনিনজিওমার জন্য দায়ি করা হলেও, কিছু সীমাবদ্ধতা থেকে গেছে। গবেষকরা শুধুমাত্র যানবাহন ও বাইরের পরিবেশে বায়ুর মান যাচাই করে পরীক্ষা চালিয়েছেন। অফিস-কাছারি কিংবা ঘরের ভিতরের পরিবেশের বায়ুর অবস্থাকে তারা বিবেচনায় আনেননি।
কোপেনহেগেনের ডেনিশ ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের এক গবেষক হভিডফেল্ড জানিয়েছেন, বিভিন্ন ধরনের বায়ু দূষণ স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। মস্তিষ্কের টিস্যুতে সরাসরি প্রভাব ফেলতে সক্ষম নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইডের মতো উপাদান। এর ফলে এটা স্পষ্ট যে বায়ু দূষণের ফলে শুধু ফুসফুস বা হার্ট নয়, ব্রেনও আক্রান্ত হতে পারে। যদিও এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন হভিডফেল্ড। একইসঙ্গে তিনি জানান, বায়ু দূষণের মাত্রা কমাতে পারলে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকিও কমবে।