‘আগের মতো সেই আনন্দ-উল্লাস আর স্কুলে দেখা যায় না’

চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু আগের মতো সেই আনন্দ-উল্লাস আর স্কুলে দেখা যায় না। শিক্ষার্থীরা ফলাফলের দিন স্কুলে তেমন আসে না। রেজাল্টের দিনের স্কুল-সংস্কৃতি পরিবর্তন হয়ে গেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের গভর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুল, বটমলী হোম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, ফলাফল প্রত্যাশী শিক্ষার্থীরা তেমন আসেনি। পৌনে ৩টার সময় গভর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুলে নাসিরুল্লা ও আনাস হোসেন নামের দুজন শিক্ষার্থী স্কুল গেটের ভেতরে অবস্থান করছে। তারা দুজনই জিপিএ-৫ পেয়েছেন।
আনাস হোসেন বলছিলেন, জিপিএ-৫ পেয়েছি। ভালো লাগছে। স্কুলে এলাম আমি আর আমার বন্ধু। আর কেউ নেই এখন। পরে আসবে হয়তো। শিক্ষার্থীরা আসেনি বলে এখনও (বিকাল পৌনে ৩টা) রেজাল্টও টানানো হয়নি।
এ প্রসঙ্গে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রহিমা আক্তারের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, আগেকার সেই সংস্কৃতি আর নেই। এখন শিক্ষার্থীরা ফলাফল জানতে স্কুলে আসে না। অনলাইনে দেখে। তবে কেউ কেউ আসে। শনি-রোববার বা সোমবার শিক্ষার্থীরা আসবে বলে আমার ধারণা। কেউ কেউ আমাদের সঙ্গে দেখা করবে। মিষ্টিমুখ করাবে। কিন্তু আগের মতো রেজাল্টের সময় স্কুলে আনন্দ-উল্লাস ও ভিড় দেখা যায় না।
গভর্নমেন্ট সায়েন্স হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দেয় ২২৩ জন শিক্ষার্থী। ২০৯ জন পাস করেছে। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৪ জন। ফেল করেছে ১৪ জন। পাসের হার ৯৩.৭২ শতাংশ।
ফলাফলের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষিকা রহিমা আক্তার বলছিলেন, যে কজন ফেল করেছে, ওরা একেবারেই কিছু পারে না। সায়েন্সে একটু না পড়লে পাস করা কঠিন। এটা সরকারি হওয়াতে কেউ এখান থেকে অন্য স্কুলে যেতে চায় না। অথচ অন্য স্কুলে মূল পরীক্ষার আগের পরীক্ষাগুলোতে ফেল করলে তাদের পরীক্ষা দিতে দেওয়া হয় না। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান হওয়ায় এখানে ওদের পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সেজন্য আমাদের সবসময় রেজাল্ট খারাপ হয়।
সায়েন্স হাইস্কুলের বিপরীত পাশেই তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলে অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দেখা গেলেও এসএসসির ফলপ্রত্যাশীদের দেখা মেলেনি। এ স্কুল থেকে ৩২৬ জন পরীক্ষা দিয়েছে, পাস করেছে ২৮২ জন। ফেল করেছে ৪৪ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৫৪ জন। পাসের হার ৮৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। স্কুলের নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, এখনও ফলাফল টানানো হয়নি। এখন আর ফলাফল নিতে তেমন কেউ আসে না। সব অনলাইনে দেখে ফেলে।
হলি ক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের বিপরীতে বটমলী হোম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলের নিরাপত্তাকর্মী আল বেনুস বলেন, ৫-৭ জন এ পর্যন্ত (দুপুর আড়াইটা) স্কুলে এসেছে। আগে এক সময় দেখতাম, সব ছাত্রীরা স্কুলে আসতো রেজাল্টের সময়। এখন রেজাল্টের সময়ও আসে না, পরেও লোকজন আসে না।
হলি ক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় দেখা গেছে, সর্বোচ্চ ১৫ জনের মতো ছাত্রী উপস্থিত ছিলেন স্কুলে। দু-একজনের সঙ্গে তাদের মায়েরাও এসেছেন। তারা বোর্ডে ফলাফল দেখছিলেন এবং উল্লাস করছিলেন। এ স্কুল থেকে এবার ২৩৪ জন পরীক্ষা দেয়, একজনও ফেল করেনি। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ১৫৩ জন পরীক্ষার্থীর সবাই জিপিএ-৫ পেয়েছে।
হলি ক্রসের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শ্রীমন্ত পিউস বলেন, রেজাল্টে আমরা খুব খুশি। ছাত্রীরা খুব ভালো করেছে। ওরা সবাই মিলে পরিশ্রম করেছে। সবাই পাস করেছে। আমরা গর্বিত। আমাদের আনন্দের দিন। তবে আজ ফল প্রকাশের দিন শিক্ষার্থীরা স্কুলে এলে আরও ভালো লাগত।