ভিসা এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড চালু করলো ব্র্যাক ব্যাংক

কর্পোরেট এবং প্রাতিষ্ঠানিক ক্লায়েন্টরা যেন নিরাপদে এবং ঝামেলাহীনভাবে আন্তর্জাতিক লেনদেন করতে পারেন, সেই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশে এই প্রথম — ব্র্যাক ব্যাংক চালু করেছে ভিসা এআরকিউ এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড।
পেমেন্ট ইন্ডাস্ট্রিতে গ্লোবাল লিডার ভিসা’র সঙ্গে এই পার্টনারশিপটি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক নির্দেশনার কারণে এই কার্ডটি চালু করা সম্ভব হয়েছে। এই নির্দেশনায় স্থানীয় এজেন্ট কোম্পানিগুলোকে এজেন্টস রিটেনশন কোটা (ARQ) নামে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের অ্যাকাউন্ট খোলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, যাতে বাংলাদেশের গার্মেন্টস বায়িংহাউস ও অন্যান্য এজেন্টদের জন্য বৈধভাবে বিদেশেনগদবিহীন লেনদেন সহজ হয়।
ভিসা কার্ড গ্রহণ করে— পৃথিবীর এমন যে-কোনো এটিএম বুথ থেকে ভিসা এআরকিউ এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ডের সাহায্যে কর্পোরেট ক্লায়েন্টরা দিনরাত ২৪ ঘন্টা টাকা তুলতে পারবেন। একইসঙ্গে পিওএস এবং ই-কমার্স ট্রানজ্যাকশনও এই কার্ডের সাহায্যে করা যাবে। এই ট্রানজ্যাকশনগুলো বিভিন্ন মুদ্রার মাধ্যমে করা সম্ভব হবে। এরসঙ্গে গ্রাহকরা রেগুলেটরের ঠিক করে দেওয়া সীমার মধ্যে কনট্যাক্টলেস পিওএস ট্রানজ্যাকশন করতে পারবেন।
এই কার্ডটি এআরকিউ অ্যাকাউন্টের সঙ্গে যুক্ত— যার মাধ্যমে ১৩ জানুয়ারি, ২০২৫ তারিখে ধার্যকৃত বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪ নম্বর এফই সার্কুলার অনুযায়ী কোম্পানিগুলো এখন এজেন্ট বা ট্রেড ফ্যাসিলিটেটর হিসেবে বৈদেশিক মুদ্রার একটি অংশ রিটেইন করতে পারবে। এই ফান্ডগুলো বিদেশে বৈধ ব্যবসায়িক খরচের জন্য ব্যবহার করা যাবে, যার মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ডের পেমেন্টও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
ব্র্যাক ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড সিইও (কারেন্ট চার্জ) তারেক রেফাত উল্লাহ খান বলেন, “আমাদের কর্পোরেট গ্রাহকদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জটিলতা সামলাতে নির্ভরযোগ্য একটি মাধ্যম প্রয়োজন। ভিসা এআরকিউ এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড গ্রাহকদের এমন এক নিরাপদ ও সহজ সুবিধা দেবে, যার মাধ্যমে তারা বিদেশে লেনদেন করতে পারবেন নির্বিঘ্নে। বৈশ্বিক বাজারে তাদের প্রবৃদ্ধি ও সাফল্যের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন এটি। বিশেষ করে দেশের তৈরি পোশাক খাতের বায়িংহাউসগুলোর প্রতিনিধিদের মার্কেটিং কার্যক্রমে বিদেশে ভ্রমণের ও রপ্তানি আদেশ সংগ্রহের সময় এই কার্ডটির মাধ্যমে ব্যাপক উপকার পাবেন। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি কৃতজ্ঞ, যারা এ কার্ড চালু করতে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দিয়েছেন।”
ব্র্যাক ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর অ্যান্ড হেড অব রিটেইল ব্যাংকিং মো. মাহীয়ুল ইসলাম বলেন, “ভিসা এআরকিউ এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড চালুর মাধ্যমে আমাদের কর্পোরেট গ্রাহকদের পরিবর্তনশীল প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে উদ্ভাবনী আর্থিক সমাধান দেওয়ার অঙ্গীকারই পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। এই কার্ডটি আন্তর্জাতিক লেনদেন পরিচালনার জন্য একটি নিরাপদ ও সুবিধাজনক মাধ্যম, যা বৈশ্বিক বাণিজ্যে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমে দক্ষতা বাড়াতে সহায়তা করবে।”
ভিসা’র বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের কান্ট্রি ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ বলেন, “বিশ্বজুড়ে পেমেন্ট সেবায় নেতৃত্বস্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্র্যাক ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের পার্টনারশিপ আরও গভীর করতে পেরে আমরা আনন্দিত। ভিসা এআরকিউ এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড চালু সেই পার্টনারশিপেরই ফল। এই উদ্ভাবনী কার্ডটি আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য একটি নিরাপদ, সুবিধাজনক ও কার্যকর মাধ্যম, যা বাংলাদেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও ভ্রমণকারীদের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী হবে। এর মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাজারে গ্রাহকদের সহজ প্রবেশ নিশ্চিত করতে পারব। একইসঙ্গে বাংলাদেশের ক্যাশলেস অর্থনীতি গড়ার লক্ষ্যেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িংহাউস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিবিএ) সভাপতি মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন পাভেল বলেন, “গার্মেন্টস বায়িংহাউস খাতের জন্য এটি একটি উল্লেখযোগ্য মাইলফলক। আমাদের সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে বৈধ বিদেশি ব্যবসায়িক ব্যয়ের ক্ষেত্রে নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন। ব্র্যাক ব্যাংক ভিসা এআরকিউ এক্সপ্রেস ইন্টারন্যাশনাল ডেবিট কার্ড সে জায়গায় বহুল প্রত্যাশিত স্বস্তি, আর্থিক নমনীয়তা ও স্বচ্ছতা নিয়ে এসেছে। এটি ব্যাংকিং খাতে এক আধুনিক ও দূরদর্শী চিন্তার প্রতিফলন, যা রপ্তানিমুখী ব্যবসার ক্রমবর্ধমান প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম। আমরা এই সময়োপযোগী উদ্যোগের জন্য ব্র্যাক ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই, যা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে এবং আরএমজি খাতের টেকসই প্রবৃদ্ধিকে সহায়তা করবে।”
এই কার্ডের লঞ্চ ব্র্যাক ব্যাংকের ক্লায়েন্টদের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যবসা সহজতর করে তোলার একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে। প্রধানত বায়িংহাউজগুলো এর সুবিধা বেশি পাবে। তারা এর সাহায্যে নিজেদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়াতে পারবে এবং ভিসা'র মতো আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে এজেন্ট কমিশন বা বায়িংহাউজ কমিশন কমিয়ে আনতে পারবে।