বিগত তিন সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনায় গঠিত কমিটিকে কমিশনে রূপান্তর

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ের সংঘটিত তিনটি সংসদ নির্বাচন ঘিরে অভিযোগ পর্যালোচনা এবং নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা বিশ্লেষণের জন্য গত ২৬ জুনে গঠন করা পাঁচ সদস্যের কমিটিকে কমিশনে রূপান্তর করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশীদ স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে এ কমিশন গঠন করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন পর্যালোচনার জন্য গঠিত এই কমিশনের সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া কমিশনে সদস্য হিসেবে রয়েছেন, সরকারের সাবেক গ্রেড-১ কর্মকর্তা শামীম আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক (সুপণ), ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী ব্যারিস্টার তাজরিয়ান আকরাম হোসাইন এবং নির্বাচন বিশ্লেষক মো. আব্দুল আলীম।
এই কমিশন গঠনের বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এসব নির্বাচনে নানা কৌশলে জনগণের ভোটাধিকার খর্ব করে একটি বিশেষ দলকে নির্বাচিত করার অভিযোগ রয়েছে।
“এরই প্রেক্ষাপটে উত্থাপিত অভিযোগগুলো পর্যালোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে করণীয় নির্ধারণ করতে সরকার নিম্নরূপে একটি কমিশন গঠন করছে।”
কমিশনের কার্যপরিধি
- ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক, নাগরিক সংগঠন, তদারকি প্রতিষ্ঠান এবং গণমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগ বিশ্লেষণ;
- নির্বাচনে দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এবং এর নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মতামত গ্রহণ ও বিশ্লেষণ;
- নির্বাচনে রাজনৈতিক দলসমূহের অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ করতে ও জনগণের ভোটাধিকার হরণে প্রদর্শিত দুর্বলতা পর্যালোচনা করে ভবিষ্যৎ সময়ে ওই সংশ্লিষ্ট দুর্বলতা রোধ;
- নির্বাচন প্রক্রিয়া সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ;
- নির্বাচনের আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ;
- তফসিল ঘোষণা কমিশনসমূহের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অর্থিক অনিয়মের অভিযোগসমূহ যাচাই ও অনুসন্ধান;
- নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল নির্বাচনি কর্মকর্তার দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ;
- জনসাধারণের আস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াবার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান;
- প্রয়োজনে যে কোনো দপ্তরের দলিল দস্তাবেজ তলব করা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, কমিশন দেশের যে কোনো স্থান পরিদর্শন, যে কোনো সরকারি দপ্তরের নথি তলব এবং সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
এছাড়া কমিশন The Commissions of Inquiry Act, 1956 এর Section 4 এবং Section 5 এর Sub-Section 2, 3, 4, 5 ও 6 এর উল্লিখিত ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।
কমিশন The Commissions of Inquiry Act, 1956 অনুযায়ী তদন্তসম্পন্ন করে আগামী ৩১ অক্টোবর ২০২৫ তারিখের মধ্যে সরকারকে নিঃশর্ত তথ্য প্রতিবেদন দাখিল করবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনের সচিবকে সহায়তা দেবে এবং বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কমিশনকে তথ্য সহায়তা দেবে।
এই প্রজ্ঞাপন অবিলম্বে কার্যকর হবে বলেও বলা হয়েছে।