তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনে অগ্রগতি, তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছায়নি : সালাহউদ্দিন

তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর চলমান সংলাপে কিছুটা অগ্রগতি হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়নি বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদ এবং প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ পদ্ধতি নিয়ে এখনও কিছু ভিন্নমত রয়ে গেছে।
আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে অনুষ্ঠিত সংলাপে বিএনপি তাদের সংশোধিত প্রস্তাবনা লিখিতভাবে উপস্থিত সবাইকে সরবরাহ করে। আলোচনায় কমিশনের আগের প্রস্তাব, অন্যান্য দলগুলোর মতামত এবং বিএনপির নতুন সংশোধিত প্রস্তাব একত্রে বিবেচনায় আনা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর একাধিক পদ নিয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী, সংসদ নেতা এবং দলীয় প্রধান—এই তিনটি পদ একই ব্যক্তি ধারণ করবেন কিনা, এ বিষয়ে প্রায় সবাই একমত যে একই ব্যক্তি প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা হতে পারেন। তবে, দলীয় প্রধান হওয়া নিয়ে কিছু দলের দ্বিমত রয়েছে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের গঠনপ্রণালী নিয়ে আমরা দলে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলোচনা করে গতরাতে কমিশনের কাছে আমাদের পরিমার্জিত মতামত জমা দিয়েছি। তিনি বলেন, আমরা আগেই বলেছি—৭০ অনুচ্ছেদে যেমন ভিন্নমত (ডিসেন্টিং ভয়েস) রাখার সুযোগ রেখেছি, এটিও সেভাবে রাখা যেতে পারে। আমাদের অবস্থান হলো, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না—এমন বিধান যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ কোথাও নেই। এটা তার একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। পার্লামেন্টারিয়ানরা যাকে চাইবেন, তিনিই হবেন প্রধানমন্ত্রী। দলীয় প্রধান প্রধানমন্ত্রী হবেনই এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই, আবার তাকে প্রধানমন্ত্রিত্ব থেকে বাদ দেওয়ারও কোনো যৌক্তিকতা নেই।
আলোচনার শেষদিকে সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে একটি কমিটি গঠনের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও বিএনপি এতে অংশ নেয়নি। সালাহউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে আজ কোনো মন্তব্য করেননি এবং জানান, আগামীকালের আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা তখন তাদের মতামত দেবেন।
বিএনপি নেতার মতে, কমিশনের পক্ষে প্রস্তাবিত ৫৮ অনুচ্ছেদের সংশোধন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মোটামুটি ঐকমত্য রয়েছে—সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৫ দিন পূর্বে বা মেয়াদপূর্তির বাইরে ভেঙে গেলে তার ১৫ দিনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করতে হবে। এখানে কোনো ভিন্নমত নেই।
বিএনপি তাদের প্রস্তাবে বাছাই কমিটিতে চারজন সদস্য—প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতা, স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) রাখার কথা বললেও আজকের আলোচনায় আরও একজন সদস্য যোগ করে মোট পাঁচজনের একটি বাছাই কমিটির প্রস্তাব ওঠে। এই পঞ্চসদস্য বিশিষ্ট কমিটিতে সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম দল থেকেও একজন প্রতিনিধি রাখা হবে।
এই কমিটি সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর কাছ থেকে প্রার্থীদের নাম আহ্বান করবে এবং নাম যাচাই করে একজন প্রধান উপদেষ্টার নাম নির্ধারণের চেষ্টা করবে। যদি সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো না যায়, তাহলে বিরোধী দল থেকে পাঁচজন, সরকারি দল থেকে পাঁচজন এবং তৃতীয় বৃহত্তম দল থেকে দুইজন করে মোট ১২ জনের তালিকা তৈরি হবে—যার মধ্য থেকে কমিটি একজনকে নির্বাচিত করার চেষ্টা করবে।
তবে যদি এখানেও একমত হওয়া না যায়, তখন কমিশনের একটি প্রস্তাব ছিল ‘র্যাংক চয়েস ভোটিং’ পদ্ধতির মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়ার। এ বিষয়ে বিএনপি একমত নয়। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা চাই বাছাই কমিটি যদি সর্বসম্মতভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে তাহলে ভালো। না হলে আমাদের প্রস্তাব, সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর (১৩ তম) পদ্ধতি অনুসরণ করা হবে।’ তবে বিএনপি তাতে রাষ্ট্রপতির প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনের বিধানটি বাতিলের সুপারিশ করেছে।