ধুন্দল চাষে ভাগ্য বদলাচ্ছে খুলনার চাষিদের

খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার গ্রামীণ জনপদে এখন এক নতুন সম্ভাবনার নাম- ধুন্দল চাষ। বিশেষ করে ফুলগাছি, গোনালী, টিপনা, ভদ্রদিয়া, বরাতিয়া ও পেরিখালি গ্রামে চোখে পড়ছে সবুজ লতায় মোড়ানো ক্ষেত, হলুদ ফুলে শোভিত মনোমুগ্ধকর দৃশ্য।
এই সম্ভাবনার জোরেই স্বাবলম্বী হয়েছেন ফুলগাছি গ্রামের মো. আলম শেখ। নিজের ৪০ শতক জমিতে ধুন্দল চাষ করে গত দুই বছরে আয় করেছেন লাখ টাকার বেশি। বর্ষার শুরুতেই কম রাসায়নিক ও অর্গানিক পদ্ধতিতে ধুন্দল, করলা, বরবটি ও শসা চাষ করে বছরে আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করছেন তিনি।
আলম শেখ জানান, আগে পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হতো। এখন ধুন্দল চাষই আমাদের জীবিকার ভরসা হয়ে উঠেছে।
শুধু আলমই নন, টিপনা গ্রামের ফারুক সরদারও এখন ধুন্দল চাষ করে বছরে পাঁচ-ছয় লাখ টাকা আয় করছেন। কম খরচ, দ্রুত ফলন ও বাজারে চাহিদা থাকায় ধুন্দল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।
কৃষি বিভাগ জানায়, ধুন্দল এখন বাণিজ্যিক ফসলে পরিণত হয়েছে। প্রতি বিঘা জমিতে ৫০ মণ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ ২০-২৫ হাজার টাকা হলেও আয় হচ্ছে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকার বেশি।
কৃষক সাইফুল ইসলাম ও আইয়ুব আলী বলেন, ধুন্দল চাষে বেশি পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না, পোকামাকড়ও তুলনামূলকভাবে কম। কৃষি অফিসের সহায়তায় মৌসুমের শুরুতে পানির সংকটও সামাল দেওয়া গেছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, এই অঞ্চলে পতিত জমি এখন ব্যবহার হচ্ছে ধুন্দলসহ বিভিন্ন সবজি চাষে। ফলে স্থানীয়দের আয়ের পথও বাড়ছে।
ডুমুরিয়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মো. ইনসাদ ইবনে আমিন বলেন, ডুমুরিয়ার সবজি শুধু খুলনা নয়, আশপাশের জেলাতেও যাচ্ছে। ধুন্দল যেমন পুষ্টিকর, তেমনি লাভজনক। আমরা কৃষকদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) খুলনা অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম জানান, খুলনা অঞ্চলে বর্তমানে ২০ হাজার ৫৬৯ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হচ্ছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ টন। তবে গত দুই সপ্তাহের ভারি বৃষ্টির কারণে ১ হাজার ৯১৭ দশমিক ৭৫ হেক্টর জমি ডুবে গেছে। ফলে প্রায় ৯৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে।