নিরাপদ খাদ্য মজুত নিশ্চিতে ৪ লাখ টন চাল কিনবে সরকার

বন্যার কারণে আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বিবেচনায় নিরাপদ খাদ্য মজুত নিশ্চিতের আগাম প্রস্তুতি হিসেব সরকারিভাবে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে চার লাখ টন চাল কেনা হবে। একইসঙ্গে বেসরকারিভাবে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দেবে সরকার।
আজ মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধান কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার। সভা শেষে খাদ্য উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘উৎপাদনসহ আমাদের অনেক ধরনের সীমাবদ্ধতা আছে। এজন্য আমরা হিসাব করেছি নভেম্বর পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য মজুদের ক্ষেত্রে কিছুটা কম পড়বে। নিরাপদ খাদ্য মজুত বলতে বুঝায় সাড়ে চাল-গম মিলিয়ে ১৩ লাখ টন রাখা।’
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা আমনে বন্যার কোনো ঝুঁকি রাখিনি। আমনে বন্যা হতে পারে, সেটা ধরে নিয়ে আগাম প্রস্তুতি হিসেবে আমরা চার লাখ টন চাল সরকারিভাবে আমদানি করার উদ্যোগ নিয়েছি। একইসঙ্গে বেসরকারি খাতে পাঁচ লাখ টন চাল আমদানির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বলেছি। গত বছরও ১৫-১৬ লাখ টন চাল আনার জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এনেছিল পাঁচ লাখ টনেরও কম। এখন যদি তাদের (ব্যবসায়ী) এনে পোষায়, তাহলে তারা আনবে। আর আমরা সরকারিভাবে চার লাখ টন আনব।’
এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্যার কারণে তরি-তরকারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আউশ কিছুটা আছে। আমনের বীজতলা তৈরি করা হচ্ছে। এখনকার বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষতি হবে না।’
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের বোরো ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে তিন লাখ টন। ২৬ হাজার টন অতিরিক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। সাড়ে ৯ লাখ টনের মতো চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। ১৪ লাখ টনের মতো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আশা করছি ইনশা আল্লাহ আমরা কাছাকাছি পৌঁছাতে পারব। আমরা আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে চাল সংগ্রহ শেষ করে দেব।’
খাদ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বাজারকে স্থিতিশীল রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম নিতে হয়। শুধু রেগুলেটরি কার্যক্রম, এগুলো নিলে চলে না। কিছু আর্থিক কার্যক্রম নিতে হয়। এখন বাজারে সরকারও ক্রেতা হিসেবে আছে, কারণ আমরা কিনছি। আমরা চিন্তা করছি, আমন সংগ্রহ শেষ করার সঙ্গে সঙ্গেই আগামী আগস্ট মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিটা চালু করব। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি হচ্ছে খাদ্য সংক্রান্ত সব আর্থিক কর্মসূচির মধ্যে সবচেয়ে ফলপ্রসূ ও সবচেয়ে বেশি পরিমাণের। আগে ৫০ লাখ পরিবার প্রতি মাসে ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল পেত। অর্থ উপদেষ্টা এটাকে এবার ৫৫ লাখ (সুবিধাভোগী) করে দিয়েছেন। এ ৫৫ লাখ পরিবার ৩০ কেজি করে চাল পাবে ছয় মাস।’
এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমাদের খাদ্য মজুদ সন্তোষজনক। চাল, ধান ও গম, এই তিনটা মূল। কী কী কিনব সেটার একটা লক্ষ্যমাত্রা আমরা দিয়েছি।’
আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম কমছে জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, প্রয়োজন হলে আমরা ওখান থেকে আনব। আমরা চেষ্টা করছি যেকোনো মূল্যে বাজার স্থিতিশীল করার। কারণ উত্থান-পতন থাকবে। একসঙ্গে সব পণ্যের দাম কমে যাবে সেটা কোনোদিন সম্ভব নয়। একসঙ্গে সব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে—এটাও কাম্য নয়। এ দিক দিয়ে আমরা একটু সজাগ আছি।