যুদ্ধবিরতি নিয়ে অগ্রগতি না হলেও বন্দি বিনিময়ে একমত রাশিয়া-ইউক্রেন

ইউরোপে ১৯৪৫ সালের পর সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধের তিন বছরেরও বেশি সময় পর ইউক্রেন ও রাশিয়ার প্রতিনিধিরা প্রথমবারের মতো আজ শুক্রবার (১৬ মে) মুখোমুখি হয়েছেন। তবে যুদ্ধবিরতি নিয়ে তেমন অগ্রগতি না হলেও দুই পক্ষ এক হাজার বন্দিকে বিনিময়ের বিষয়ে একমত হয়েছে—যা এই অন্ধকার সময়ে একটি আশার আলো বলে মনে করা হচ্ছে। খবর বিবিসির।
এই ঐতিহাসিক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয় তুরস্কের ইস্তাম্বুলের বসফরাস উপকূলে অবস্থিত ওসমানীয় যুগের এক প্রাসাদে। আলোচনার উদ্যোগ নিতে তুরস্ক ও যুক্তরাষ্ট্র বড় ভূমিকা পালন করেছে।
আলোচনার কক্ষে ছিল ইউক্রেন, রাশিয়া ও তুরস্কের পতাকা এবং একটি বিশাল ফুলের তোড়া। তবে বাস্তবতা ছিল ভিন্ন—ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের অর্ধেকই সামরিক পোশাকে ছিলেন।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাকান ফিদান বৈঠকের শুরুতেই বলেন, “আপনাদের সামনে দুটি পথ—একটি শান্তির, অন্যটি ধ্বংস আর মৃত্যুর।”
আলোচনা চলে মাত্র দুই ঘণ্টার কম সময়। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানান, আলোচনা শুরু হতেই রাশিয়া “নতুন ও অগ্রহণযোগ্য শর্ত” তোলে—তারা চায় ইউক্রেন নিজেদের ভূখণ্ডের বড় একটি অংশ থেকে সেনা সরিয়ে নিক, এর বিনিময়ে একটি যুদ্ধবিরতি হতে পারে। ইউক্রেন এই দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে আলোচনার একটি ইতিবাচক ফলাফল এসেছে—উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে এক হাজার করে যুদ্ধবন্দি ফেরত দেবে।
ইউক্রেনের উপপ্রতিরক্ষামন্ত্রী সেরহি কিসলিৎসা বলেন, “এটা ছিল একটি কঠিন দিনের খুব ভালো সমাপ্তি এবং এক হাজার ইউক্রেনীয় পরিবারের জন্য চমৎকার খবর।”
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুস্তেম উমেরভ জানিয়েছেন, বন্দি বিনিময়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে, তবে এখনই প্রকাশ করা হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, “পরবর্তী ধাপ হওয়া উচিত প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি ও পুতিনের সরাসরি বৈঠক।”
রাশিয়ার প্রতিনিধি দলের প্রধান ও প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা ভ্লাদিমির মেদিনস্কি জানান, ইউক্রেনের প্রস্তাব রাশিয়া ‘নোট’ করেছে এবং তারা আরও আলোচনায় আগ্রহী। বৃহস্পতিবার রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে “একজন ভাঁড় ও পরাজিত ব্যক্তি” বলে আখ্যা দিলেও শুক্রবার তাদের কণ্ঠে কিছুটা নরমভাব লক্ষ্য করা যায়।

তবে ইউক্রেন ও তাদের কিছু মিত্র দেশ আশঙ্কা করছে, রাশিয়া এই আলোচনার মাধ্যমে শুধু সময় কিনতে চায়, আন্তর্জাতিক চাপ থেকে মনোযোগ সরাতে চায় এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের আসন্ন ১৮তম নিষেধাজ্ঞার রাউন্ড ঠেকাতে চায়।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, “আসল আলোচনা তখনই হবে যখন আমি ও পুতিন একসঙ্গে বসব।” তিনি বৃহস্পতিবার এয়ারফোর্স ওয়ানে এই মন্তব্য করেন।
তবে সেই শীর্ষ বৈঠক কবে হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, “শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক অবশ্যই দরকার, তবে সেটি প্রস্তুত করতেই সময় লাগবে।”
এখনও পর্যন্ত যেটা প্রায় নিশ্চিত—সেই বৈঠকে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির আমন্ত্রণ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।