ট্রাম্পের শুল্কারোপে যে প্রভাব পড়তে যাচ্ছে কানাডা ও মেক্সিকোর বাণিজ্যে

কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কারোপের ফলে অটোমোবাইল শিল্প থেকে শুরু করে অ্যাভোকাডো রপ্তানির পুরো সরবরাহ ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়তে যাচ্ছে। উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ার কারণে ইতোমধ্যে ধুঁকতে থাকা শিল্প পণ্যের জন্য এই সিদ্ধান্তকে আরও একটি ধাক্কা হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে। খবর এএফপির।
২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী কানাডা ও মেক্সিকো-এই দুটি দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ৯০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য হয়ে আসছে। পারস্পরিক সম্পর্কে যুক্ত এই তিনটি দেশের মধ্যে রয়েছে বাণিজ্য চুক্তিও। আর এ কারণে এক দেশের ওপর শুল্ক আরোপ হলে তা প্রভাব ফেলে অন্য দেশগুলোর ওপর।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপ করা ২৫ শতাংশ শুল্ক কানাডা ও মেক্সিকোর অটোমোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স শিল্পে সবচেয়ে বেশি আঘাত হানতে যাচ্ছে।
কানাডার জ্বালানি রপ্তানির ওপর যদিও ১০ শতাংশ শুল্কারোপ করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে এর আগে কানাডা থেকে তেল আমদানিতে ওয়াশিংটন কোনো শুল্ক আরোপ করতো না। এছাড়া মেক্সিকো ও কানাডা থেকে প্রচুর কৃষিজাত পণ্য আমদানি করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। তাই শুল্কারোপের সিদ্ধান্ত অ্যাভোকাডো থেকে টমেটোর মতো পণ্যের দাম নির্ধারণে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
কানাডার জ্বালানি ও অটোমোবাইল শিল্প
কানাডার মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশই করা হয় যুক্তরাষ্ট্রে, আর এর পরিমাণ প্রায় ৪১০ বিলিয়ন ডলার। যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক তাই দেশটির গাড়ি নির্মাণ ও জ্বালানি শিল্পের ওপর বেশ জোরালোভাবেই আঘাত করবে বলে মনে করা হচ্ছে। কানাডার মোট রপ্তানির ৪০ শতাংশই হয় এসব খাত থেকে। জ্বালানি রপ্তানির পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে অপরিশোধিত তেল, আলকাতরা ও প্রাকৃতিক গ্যাস।
কানাডার জনবহুল ওন্টারিও প্রদেশের অটোমোবাইল সেক্টর তাই বেশকিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি এখন। এই শিল্পে নির্মাণ থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদনের শেষ ধাপ পর্যন্ত কয়েকগুণ শুল্ক আরোপ করা হতে যাচ্ছে বলে মনে করেন রবার্ট কাভসিচ নামে ব্যাংক অব মন্ট্রিলের একজন কর্মকর্তা। এক গবেষণা পত্রে তিনি এই ধরনের মন্তব্য করেন।
এছাড়া কানাডা থেকে যুক্তরাষ্ট্র নির্মাণ শিল্পের জন্য পণ্য আমদানি করে থাকে। তাই শুল্ক আরোপ করা হলে বাড়ি কিনতে ও বানাতে বাড়তি অর্থ গুনতে হবে মানুষকে। এ বিষয়ে ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব হোম বিল্ডার্সের চেয়ারম্যান কার্ল হ্যারিস বলেন, কানাডা ও মেক্সিকো থেকে বাড়িঘর বানানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্র ৭০ শতাংশ পণ্য আমদানি করে থাকে। তিনি বলেন, কাঠ ও অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রীর ওপর শুল্ক আরোপের ফলে নতুন উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।
মেক্সিকোর অটোমোবাইল ও ইলেকট্রনিক্স শিল্প
মেক্সিকোর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিসটিক্সের তথ্য অনুসারে দেশটি গত বছর সারা বিশ্বে যে পণ্য বিক্রি করেছে তার ৮৪ শতাংশই বিক্রি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে এবং এর পরিমাণ ৫১০ বিলিয়ন ডলার।
তাই নতুন করে শুল্কারোপের এই সিদ্ধান্ত গাড়ি নির্মাণ, যন্ত্রাংশ উৎপাদন শিল্পের পাশাপাশি ইলেকট্রনিক্স ও যন্ত্রপাতি উৎপাদন খাতে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে। কেননা এসব পণ্যের অর্ধেকের বেশি রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে।

তাছাড়া ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের ওপরেও বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের মোট সবজি আমদানির ৬৩ ভাগই করা হয়েছিল মেক্সিকো থেকে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের মোট ফল আমদানির অর্ধেকেরও বেশি আসে মেক্সিকো থেকে। মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাভোকাডো আমদানির ৮০ শতাংশ চাহিদাও পূরণ করে আসছে।
শুল্ক আরোপের উল্লেখযোগ্য প্রভাব
অর্থনীতিবিদরা হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই উচ্চ হারের শুল্ক আরোপ এবং এর পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার ফলে কানাডা ও মেক্সিকোর অর্থনীতি মন্দার ঝুঁকিতে পড়তে যাচ্ছে। পাশাপাশি নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও।
এ বিষয়ে অর্থনীতিবিদ গ্রেগরি ডাকো বলেন, ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের এই সিদ্ধান্ত একটি পরিষ্কার বার্তা দিচ্ছে আর তা হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট তার আমেরিকা ফার্স্ট নীতিকে তুলে ধরার মাধ্যমে বাণিজ্যকে ভূরাজনৈতিক উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করছেন।