সুন্দরবন দিয়ে পুশ ইন করা ৭৮ জনকে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর

পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরার মান্দারবাড়ি সীমান্ত দিয়ে ভারতের নৌবাহিনীর পুশ ইন করা ৭৮ জনকে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করেছে কোস্টগার্ড। গতকাল রোববার (১১ মে) রাত ১১টার দিকে তাদের শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়।
হস্তান্তর করা ৭৫ জন বাংলাদেশি নাগরিককে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে এবং বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিনজন ভারতীয়কে শ্যামনগর থানায় রাখা হয়েছে। রাতেই তাদের প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। তাদের অধিকাংশের বাড়ি নড়াইল, খুলনা ও সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন এলাকায়।
আজ সোমবার (১২ মে) তাদেরকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছেন কালিগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিথুন সরকার।
পুশইন করা একাধিক ব্যক্তি বলেন, তারা সকলেই ভারতের গুজরাটের সুরাট বস্তিতে থাকতেন এবং ছোটখাট কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গত ২৬ এপ্রিল তাদের বস্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় স্থানীয় প্রশাসন। ওইদিন রাতেই তাদের আটক করা হয়। সেখান থেকে তাদের হাত ও চোখ বেঁধে নেওয়া হয় পুলিশ ক্যাম্পে। সেখানে চার দিন রাখার পর বিমানে করে আনা হয় কোলকাতায়। কোলকাতা থেকে তাদেরকে জাহাজে করে এনে গত ৯ মে বঙ্গপোসাগরের তীরবর্তী মান্দারবাড়িয়া এলাকায় নিয়ে চোখ বেঁধে একটি চরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
পরে তারা পায়ে হেঁটে বনবিভাগের মান্দারবাড়িয়া ফরেস্ট ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। রোববার কোস্টগার্ড তাদের মোংলায় নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা ও তাদের নাম পরিচয় শনাক্তকরণের কাজ শেষে রাতে শ্যামনগর থানায় হস্তান্তর করে। তারা বাংলাদেশি হলেও দীর্ঘদিন ধরে তারা গুজরাটে বসবাস করতেন।
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, ‘২৬ এপ্রিল থেকে ৬ মে পর্যন্ত তাদের সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা হয়েছে। তাদের ঠিকমতো খেতে দেওয়া হতো না। মাঝেমধ্যে মারধর করা হতো। এছাড়া তারা সবসময় আমাদেরকে গালিগালাজ করত।’
এদিকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তিনজন বলেন, তাদের বাবা-মা গুজরাটে থাকাকালে সেখানেই তাদের জন্ম হয়। তাই জন্ম সূত্রে তারা ভারতীয় নাগরিক। তাদের সব ধরনের কাগজপত্র ছিল। ২০২৪ সালের তাদের সকল কাগজপত্র ভারত সরকার কর্তৃক নিয়ে নেওয়া হয়।
মান্দারবাড়িয়া টহল ফাঁড়ির ওসি মোবারক হোসেন বলেন, তার ফাঁড়িতে তিন দফায় মোট ৭৮ জন মানুষ আশ্রয় নেয়। শুরুতে ৩২ জন এলেও পরবর্তীতে আরও দুই দফায় ৪৬ জন মানুষ পায়ে হেঁটে তার ফাঁড়িতে এসে পৌঁছায়।
বনবিভাগের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) মশিউর রহমান বলেন, প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে ৭৮ জন বাংলাভাষীকে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে আটক করা হয়। তাদের ভারতীয় একটি জাহাজ ও স্পিডবোটে করে গত ৯ মে বঙ্গপোসাগরের একটি চরে ফেলে যাওয়া হয়। পরবর্তীতে তারা পায়ে হেঁটে নিকটস্থ মান্দারবাড়িয়া টহল ফাঁড়িতে আশ্রয় নেয়। শনিবার রাতে তাদেরকে কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. রনী খাতুন বলেন, আকস্মিকভাবে ৭৮ জনকে বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী নির্জন চরে ফেলে যাওয়ার ঘটনা সবাইকে বিস্মিত করেছে। পরবর্তীতে বনবিভাগ ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের সহায়তায় এসব মানুষকে মান্দারবাড়িয়া টহলফাঁড়িতে আশ্রয় দেওয়া হয়। এসময় তাদের নাম পরিচয় ঠিকানা শনাক্তের পাশাপাশি তাদের সুস্থ রাখার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার, চাল, ডাল ও পানিসহ প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী পাঠানো হয়।