সীমানা নিয়ে বিরোধে প্রতিপক্ষের হামলায় ট্রাকচালকের মৃত্যুর অভিযোগ

গোপালগঞ্জে জমির সীমানা নিয়ে বিরোধের জেরে প্রতিবেশী তপন বৈরাগী গংদের হামলায় আহত মন্টু মোল্যা (৫৫) ৫ দিন পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় ঢাকায় মারা গেছেন বলে অভিযোগ করেছেন তার স্বজনরা। মন্টু মুকসুদপুর উপজেলার খান্দারপাড়া গ্রামের মৃত ফজর মোল্যার ছেলে। তিনি পেশায় একজন ট্রাকচালক ছিলেন।
নিহতের ভাই মিলন মোল্যা জানান, গত ১৪ এপ্রিল মন্টু মোল্যা তার নিজের জায়গায় রান্না ঘর তৈরির কাজ শুরু করেন। পাশের ওই জমির মালিক দাবি করে সুধীর বৈরাগীর ছেলে তপন বৈরাগীসহ একদল লোক ঘর তুলতে বাধা দেয় ও পুলিশে খবর দেয়। এরপর মুকসুদপুর থানার এসআই প্রদীপ কুমার দাস দুপুরে দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ বন্ধ রেখে মন্টুসহ উভয়পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে থানায় যেতে বলেন। পুলিশ চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই একদল লোক রামদাসহ দেশীয় ধারালো অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে মন্টু মোল্যার ওপর হামলা চালায়। এ সময় মন্টুকে মাথাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে। এসআই প্রদীপ কুমার দাস পথিমধ্যে হামলার খবর পেয়ে পুনরায় ঘটনাস্থলে যান এবং গুরুতর আহত মন্টু মোল্যার ছেলে স্কুল শিক্ষার্থী শাওন মোল্যাকে উল্টো আটক করে থানায় নিয়ে যান। এদিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছানোর আগেই স্থানীয়রা মন্টুকে উদ্ধার করে প্রথমে কাশিয়ানী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজে নেওয়া হয়। সেখানেও অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় ঐদিনই তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেও অবস্থা বেগতিক দেখে চিকিৎসক আইসিইউতে রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু আইসিইউতে সিট না পাওয়ায় ১৫ এপ্রিল তাকে নিয়ে ভর্তি করা হয় ঢাকার বংশালের ম্যাক্সএইড হাসপাতালে। গতকাল শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) রাতে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মন্টু মারা যান।
নিহত মন্টু মোল্যার ভাই লিটু মোল্যার স্ত্রী আসমা বেগম অভিযোগ করে বলেন, ঘটনার পর এসআই প্রদীপ কুমার দাস হামলাকারীদের কিছু বলেননি। উপরন্তু আমার ভাসুরের ছেলে নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী শাওন মোল্যাকে থানায় ধরে নিয়ে যায়।
খান্দারপাড়া গ্রামের ১ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য কাবুল শেখ জানান, খবর পেয়ে পুলিশের এসআই প্রদীপ কুমার দাস ঘটনাস্থলে এসে মন্টুর ওপর প্রতিপক্ষের হামলায় আহত বিষয়টি এড়িয়ে জানালার গ্লাসে মাথা কেটে গেছে বলে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করেন। একপর্যায়ে হামলাকারীদের কিছু না বলে তাদের কথা অনুযায়ী উল্টো গুরুতর আহত মন্টুর ছেলে শাওন মোল্যাকে ওই এসআই প্রদীপ থানায় ধরে নিয়ে যান। পরে বিষয়টি থানার ওসি মোস্তফা কামালকে মাথায় আঘাতের ছবি দেখালে তিনি বিষয়টি ধারালো অস্ত্রের আঘাত বলে জানান এবং শাওনকে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। পরে রাতে তার জিম্মায় শাওনকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
অভিযুক্ত এসআই প্রদীপ কুমার দাস বলেন, ঘটনাস্থলে গিয়ে আমি আহত মন্টু মোল্যাকে দেখতে পাইনি। তবে সুধীর বৈরাগীর বাড়ির লোকজন আমাকে বলেছেন জানালার কাচের আঘাতে মন্টুর মাথা কেটেছে। এই ধারণা থেকেই ভেবেছি মন্টুর মাথা কেটেছিল। আর ওই সময় মন্টুর ছেলে শাওন প্রতিপক্ষের বাড়ি ভাঙচুর করতে এগিয়ে আসছিল। সেই কারণে তাকে আটক করে নিয়ে এসেছিলাম। টাকার বিনিময়ে শাওনকে পরে রাতে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি এবিষয়ে কিছুই জানি না। ওসি মোস্তফা কামালের নির্দেশে আমি রাতে শাওনকে ছেড়ে দিয়েছি।
মুকসুদপুর থানার এসআই ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মন্টু নিহত হওয়ার আগে ১৬ এপ্রিল মন্টুর ভাই মিলন মোল্যা বাদী হয়ে তপন বৈরাগী, স্বপন বৈরাগী, গৌর বিশ্বাস, সুধীর বৈরাগী, কানাই বিশ্বাসসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও ১০/১২ জনের বিরুদ্ধে মুকসুদপুর থানায় একটি মামলা করেন। এলাকা এখন শান্ত রয়েছে। ওই গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
মুকসুদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোস্তফা কামাল জানান, প্রতিপক্ষের হামলায় মন্টু মোল্যা নিহত হয়েছেন। হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। পরিস্থিতি এখন শান্ত আছে। টাকার বিনিময়ে নিহতের ছেলে শাওনকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি সঠিক না। তবে কেউ টাকা নিয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে তদন্ত-পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।