সুদানে কলেরায় ৪০ জনের মৃত্যু

সুদানের দারফুর অঞ্চলে কলেরায় অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আন্তর্জাতিক চিকিৎসা সহায়তা সংস্থা ডাক্তারস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ)-এর মতে, দেশটির কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব এটি।
বৃহস্পতিবার (১৪ আগস্ট) এমএসএফ জানায়, পশ্চিমের এই বিশাল অঞ্চলটি ইতোমধ্যেই সুদানি সেনা ও আধাসামরিক র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞে বিপর্যস্ত। এর ওপর যুক্ত হয়েছে এক বছর আগে শুরু হওয়া এই কলেরা প্রাদুর্ভাবের সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব।
এএফপি’র প্রতিবেদনে এমএসএফ বলেছে, “একটি সর্বাত্মক যুদ্ধের পাশাপাশি এখন সুদানের মানুষ কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ কলেরা প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি।” শুধু দারফুর অঞ্চলে গত এক সপ্তাহেই এমএসএফের দল ২ হাজার ৩০০-এর বেশি রোগীকে চিকিৎসা দিয়েছে এবং ৪০টি মৃত্যুর ঘটনা নথিভুক্ত করেছে।
দেশজুড়ে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ আগস্ট ২০২৩ থেকে এখন পর্যন্ত ৯৯ হাজার ৭০০ সন্দেহভাজন কলেরা রোগী এবং ২ হাজার ৪৭০ মৃত্যুর ঘটনা রিপোর্ট করেছে।
দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ানো এই ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ মারাত্মক ডায়রিয়া, বমি ও পেশীতে টান ধরাতে পারে। চিকিৎসা না হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হতে পারে, যদিও সাধারণ স্যালাইন বা অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসা প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম।
বুধবার খার্তুমে ১০ দিনের টিকাদান কর্মসূচি শুরু করেছে স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, যা যুদ্ধ, ব্যাপক বাস্তুচ্যুতি এবং অতিবৃষ্টির কারণে আরও মারাত্মক হয়ে ওঠা প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর প্রচেষ্টা।
এমএসএফ জানায়, সংঘাতের কারণে গৃহহীন হয়ে পড়া লাখো মানুষ এখন পানীয়, রান্না ও স্বাস্থ্যবিধির জন্য নিরাপদ পানি পেতে হিমশিম খাচ্ছে। উত্তর দারফুরের টাওয়িলায়, যেখানে প্রায় ৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ এল-ফাশারের কাছে চলমান সংঘাত থেকে পালিয়ে এসেছে, তারা দৈনিক মাথাপিছু মাত্র ৩ লিটার পানি পাচ্ছে—যা জরুরি ন্যূনতম চাহিদার অর্ধেকেরও কম।
এমএসএফের টাওয়িলা প্রকল্পের সমন্বয়ক সিলভাঁ পেনিকো বলছেন, “বাস্তুচ্যুত ও শরণার্থী শিবিরে অনেক পরিবার দূষিত উৎসের পানি ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প পান না এবং অনেকেই কলেরায় আক্রান্ত হন। মাত্র দুই সপ্তাহ আগে এক শিবিরের কূপে একটি মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল। সেটি সরিয়ে নেওয়া হলেও দুই দিনের মধ্যে মানুষ বাধ্য হয়ে আবার সেই পানি পান করতে শুরু করে।”
গত মার্চে সেনাবাহিনী খার্তুম পুনর্দখলের পর দারফুরে সংঘাত আরও তীব্র হয়েছে, যেখানে আরএসএফ এল-ফাশার শহর দখলের চেষ্টা করছে—যা সেনা নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলের শেষ প্রধান নগরী। জাতিসংঘ এ শহরে আটকে থাকা সাধারণ মানুষের অবস্থা ‘মারাত্মক’ বলে বর্ণনা করেছে।

এমএসএফ সতর্ক করে বলেছে, অতিবৃষ্টিতে পানি উৎস দূষিত হয়েছে এবং নষ্ট হয়েছে নিকাশী ব্যবস্থা। সংঘাত থেকে পালিয়ে যাওয়া মানুষজন রোগটি প্রতিবেশী চাদ ও দক্ষিণ সুদানে ছড়িয়ে দিচ্ছে।
সুদানে এমএসএফের মিশন প্রধান তুনা তুর্কমেন বলেন, পরিস্থিতি “ব্যাপক জরুরি”। তিনি বলেন, “প্রাদুর্ভাব এখন কেবল বাস্তুচ্যুত শিবিরেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দারফুরের একাধিক এলাকা এবং এর বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। যুদ্ধ থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষদের একটি প্রতিরোধযোগ্য রোগে মরতে দেওয়া যাবে না।”
২০২৩ সালের এপ্রিলে খার্তুমে শুরু হওয়া সুদানের এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে, প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে এবং কয়েক মিলিয়ন মানুষ দুর্ভিক্ষের মুখে রয়েছে।