বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপপুঞ্জ কি হুমকির মুখে?

আর্কটিক বৃত্তের ৩০০ কিলোমিটারের ভেতরে অবস্থিত এক বিস্ময়কর সৌন্দর্য নরওয়ের লোফোটেন দ্বীপপুঞ্জ। ‘মিডনাইট সান’–এর জন্য বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই দ্বীপপুঞ্জ। তবে এই খ্যাতির সঙ্গে এসেছে পর্যটনের চাপ এবং স্থানীয়দের উৎকণ্ঠা। দ্বীপবাসীরা এখন উদ্বিগ্ন, এতটা ভালোবাসা কি লোফোটেনকে ধ্বংস করে দেবে? খবর বিবিসির।
গ্রীষ্মে ২৪ ঘণ্টার সূর্যালোক, বরফগলা পাহাড়ের ফাঁকে ফাঁকে নীল-স্বচ্ছ পানি আর দিগন্তজুড়ে বিস্তৃত ফিয়র্ড — এমন দৃশ্যেই বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়েছে লোফোটেন দ্বীপপুঞ্জ। ছোট্ট গ্রাম ফ্লাকস্টাডের পাশে সমুদ্র সৈকতের পানি আয়নার মতো স্বচ্ছ। এসব কারণেই দ্বীপগুলো নিজেদের "বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপ" বলে দাবি করে।
যদিও দ্বীপপুঞ্জে পর্যটন নতুন নয়। ভাইকিং যুগ থেকেই এখানে মানুষ এসেছে বাণিজ্যের টানে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মাধ্যমে লোফোটেনের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে দ্রুত। ২০২৩ সালে প্রায় ১০ লাখ পর্যটক এসেছিলেন, যা দ্বীপটির স্থায়ী জনসংখ্যার ৪০ গুণ।

স্থানীয় বাসিন্দা আসট্রিড হাউগেন এবং ফ্রিদা বার্গ জানান, তারা পর্যটনের মাধ্যমে আসা নতুন কর্মসংস্থান ও সুযোগকে স্বাগত জানালেও, উদ্বিগ্ন দ্বীপের পরিবেশ ও সুরক্ষার বিষয়ে। তারা বলছেন, পর্যটকরা প্রায়ই ট্রেইল থেকে সরে গিয়ে প্রাকৃতিক বাসস্থান নষ্ট করছেন, আবর্জনা ফেলছেন এবং সরু রাস্তা বন্ধ করে দিচ্ছেন।

নরওয়ে সরকার পর্যটনের চাপে থাকা এলাকাগুলোতে ২০২৬ সাল থেকে ভ্রমণ কর আরোপের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অর্থ দিয়ে পার্কিং, ট্রেইল সাইনেজ এবং রক্ষণাবেক্ষণ খরচ চালানো হবে।
দক্ষিণের নুসফিয়রড গ্রামটি এখন মূলত পর্যটকদের জন্য সংরক্ষিত একটি “জীবন্ত জাদুঘর”, যেখানে স্থায়ী বাসিন্দা মাত্র ২২ জন, অথচ বছরে আসে ৯০ হাজার পর্যটক। অন্যদিকে হেনিংসভেয়ার গ্রামে রাত ১০টাতেও স্থানীয়রা মাঠে ফুটবল খেলে, নৌকায় মাছ ধরে সেখানে পর্যটন এবং স্থানীয় সংস্কৃতির মাঝে ভারসাম্য বজায় আছে।

পর্যটনের অর্থনীতি দ্বীপপুঞ্জের ১৯ শতাংশ চাকরি নির্ভর করে এই খাতে। তবে স্থানীয়রা বলছেন, এটা যেন ‘আর্কটিক ডিজনিল্যান্ড’ না হয়ে যায়। তারা চান, পর্যটকরা যেন এই প্রকৃতি উপভোগ করার পাশাপাশি সচেতন থাকেন, যেন এই সৌন্দর্য নষ্ট না হয়।
আলো ঝলমলে গ্রীষ্মের রাতের শেষে বার্গ বললেন, “আমরা চাই মানুষ লোফোটেনকে ভালোবাসুক কিন্তু এতটা না যে, এতে লোফোটেন আর লোফোটেন না থাকে।”

এই দ্বীপগুলোর সৌন্দর্য একদিকে যেমন পর্যটক টানে, অন্যদিকে স্থানীয়দের শান্তি, জীবনযাত্রা ও প্রকৃতিকে হুমকির মুখে ফেলে। এখন সময় এসেছে, সবাই মিলে সেই ভারসাম্য খুঁজে বের করার — যাতে এই নরওয়েজীয় রত্ন শুধু চোখ নয়, মনকেও ছুঁয়ে যেতে পারে এবং ভবিষ্যতের জন্য রক্ষা পায়।