দ্রুজ সম্প্রদায় কারা, কেন সিরিয়ায় হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল?

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় সুইদা প্রদেশে ফের ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হয়েছে, যেখানে দ্রুজ ও সুন্নি বেদুইন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষে শতাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এরই মধ্যে ইসরায়েলও সামরিক হস্তক্ষেপ শুরু করেছে। জাতিগত ও ধর্মীয় বিভাজনের সুযোগে দেশটির নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে। খবর বিবিসির।
কারা এই দ্রুজ সম্প্রদায়?
দ্রুজরা মূলত আরবভাষী একটি জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠী, যারা সিরিয়া, লেবানন, ইসরায়েল এবং গোলান মালভূমিতে বসবাস করে। তাদের ধর্মবিশ্বাস শিয়া ইসলামের একটি শাখা থেকে উৎপন্ন হলেও এটি একটি স্বতন্ত্র ধর্মীয় মতবাদে রূপ নিয়েছে।
বিশ্বজুড়ে দ্রুজদের মোট সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ, যার অর্ধেকই সিরিয়ায় বাস করে। দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ দ্রুজ। ইসরায়েল ও গোলান মালভূমিতে প্রায় ১ লাখ ৫২ হাজার দ্রুজ বাস করে এবং তারা সাধারণত ইসরায়েলি রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্যপূর্ণ বলে বিবেচিত হন।
কী ঘটেছে সুইদায়?
রোববার (১৩ জুলাই) এক দ্রুজ ব্যবসায়ী অপহরণের ঘটনায় দ্রুজ মিলিশিয়া ও সুন্নি বেদুইনদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর ১৫ জুলাই ইসরায়েল সরাসরি হস্তক্ষেপ করে এবং দাবি করে, তারা দ্রুজদের রক্ষা করতে এবং তাদের ওপর হামলাকারী সিরিয়ার প্রো-গভর্নমেন্ট বাহিনীকে লক্ষ্য করে হামলা চালাচ্ছে।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, রোববার থেকে বুধবার পর্যন্ত সুয়েইদায় অন্তত ৩০০ জন নিহত হয়েছেন।
কেন ইসরায়েল হামলা করছে?
ইসরায়েল বলছে, তারা দ্রুজ সম্প্রদায়ের সুরক্ষায় এগিয়ে এসেছে। তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরায়েল আসলে সিরিয়ার দক্ষিণ সীমান্তকে একটি "নিরস্ত্রকরণ এলাকা" বানাতে চায়, যাতে ইসলামপন্থী যোদ্ধারা সেখানে শক্তিশালী না হতে পারে।
১৫ জুলাই ইসরায়েলের হামলা মূলত সুইদার নিরাপত্তা বাহিনী ও যানবাহনের ওপর সীমিত থাকলেও, ১৬ জুলাই তা ব্যাপক আকার নেয়। দামেস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং সেনা সদর দপ্তরেও হামলা চালানো হয়। একটি টিভি সম্প্রচারে দেখা যায়, সরাসরি সম্প্রচারের সময় বিস্ফোরণের শব্দে উপস্থাপক স্টুডিও ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন।
এ হামলাকে সিরিয়া "গুরুতর উসকানি" হিসেবে অভিহিত করেছে এবং বলেছে, এটি দেশের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন।

ইসরায়েল-দ্রুজ সম্পর্ক
আসাদের পতনের পর ইসরায়েল দ্রুজদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা এই সম্প্রদায়কে নিজেদের এক ধরনের মিত্র হিসেবে ভাবছে, যেহেতু নতুন ইসলামপন্থী নেতৃত্বের অধীনে দ্রুজসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুরা প্রান্তিক হয়ে পড়ছে। তবে লেবানন ও সিরিয়ার অনেক দ্রুজ নেতা ইসরায়েলকে "সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করে আঞ্চলিক আধিপত্য বাড়াতে চায়" বলে অভিযুক্ত করেছেন।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া
ইসরায়েলি হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে লেবানন, ইরাক, কাতার, জর্ডান, মিসর ও কুয়েতসহ বহু আরব দেশ। সৌদি আরব একে “উন্মুক্ত আগ্রাসন” বলে উল্লেখ করেছে, আর ইরান বলেছে, এটি ছিল “অত্যন্ত প্রত্যাশিত একটি হামলা।”

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সুইদা ও দামেস্কে ইসরায়েলের এই আগ্রাসনকে “সহিংসতা বৃদ্ধির” জন্য দায়ী করেছেন এবং অবিলম্বে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, “এই ভয়াবহ ও অস্থির পরিস্থিতির অবসানে আমরা অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে সম্মত হয়েছি কিছু নির্দিষ্ট পদক্ষেপে।”