যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক ভবিষ্যৎ কি চীনের হাতে জিম্মি?

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র চীনে প্রায় ১৪৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, কিন্তু দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৯৫ বিলিয়ন ডলারে। এই ঘাটতি কমাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন, যার জবাবে চীনও মার্কিন পণ্যের ওপর ১২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছে।
ট্রাম্প অন্যান্য দেশের জন্য ৯০ দিনের শুল্ক স্থগিত করলেও চীনের ক্ষেত্রে সেই সুবিধা নেই, যার ফলে উত্তেজনা আরও বেড়েছে।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, তারা ‘শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে প্রস্তুত’ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) নীতিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছে। খবর আল-জাজিরার।
চীন কীভাবে জবাব দিতে পারে?
চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিশোধমূলক অস্ত্র হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ, অর্থাৎ মার্কিন ট্রেজারি বন্ড। চীন বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঋণধারক, যার কাছে ৭৬০ বিলিয়ন ডলারের ট্রেজারি বন্ড রয়েছে।
এই বন্ডগুলো চীন মার্কিন ডলারকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মানদণ্ড হিসেবে ধরে কম ঝুঁকির বিনিয়োগ হিসেবে কিনেছে। শুধু জাপানই চীনের চেয়ে বেশি, প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের ট্রেজারি বন্ড ধরে রেখেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন চাইলে এই ঋণ ‘ওয়েপোনাইজ’ করতে পারে, অর্থাৎ এটি দ্রুত বিক্রি করে মার্কিন ডলারের মান কমিয়ে দিতে পারে।
গ্রাউন্ডওয়ার্ক কোলাবোরেটিভের নীতিনির্ধারক অ্যালেক্স জ্যাকেজ বলেন, ‘যখন দুই দেশের মধ্যে বাজারে প্রবেশ কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে, তখন প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে এটাই হতে পারে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।’
তবে এতে চীন নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মার্কিন ডলারের মান পড়ে গেলে চীনের নিজস্ব ডলারভিত্তিক সম্পদের দাম কমবে এবং ইউয়ানের মান বেড়ে যাবে, ফলে চীনের রপ্তানি খরচ বেড়ে যাবে এবং বৈদেশিক আয় কমবে।
চীন বর্তমানে সরকারি ও ব্যাংক পর্যায়ে মিলিয়ে প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলারের মার্কিন সম্পদ ধারণ করছে, যা তার হাতে যথেষ্ট অর্থনৈতিক প্রভাব রাখে।
যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা ব্যবস্থা কী হতে পারে?
এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ দ্রুত প্রতিকার হিসেবে কোয়ান্টিটেটিভ ইজিং (কিউই) চালু করতে পারে। এর মাধ্যমে তারা বন্ড কিনে বাজারে তারল্য বাড়িয়ে সুদের হার কমিয়ে দেয় এবং অর্থনৈতিক গতি বাড়াতে সাহায্য করে, যেমনটি কোভিড মহামারির সময় দেখা গিয়েছিল।
তবে ফেডারেল রিজার্ভ বর্তমানে সুদের হার কমানোর বিষয়ে অনিশ্চিত, বিশেষ করে যখন ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলো প্রতিদিনই বদলাচ্ছে।
মরগ্যান স্ট্যানলির পূর্বাভাস বলছে, ২০২৫ সালের বাকি সময়ে ফেড সুদহার কমাবে না।
জনসাধারণ কী বলছে?
এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে মার্কিন ভোক্তাদের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। ইউনিভার্সিটি অব মিশিগান প্রকাশিত কনজ্যুমার সেন্টিমেন্ট ইনডেক্সে দেখা গেছে, গত মাসের তুলনায় জনগণের আস্থা ১১ শতাংশ কমে গেছে।
কনফারেন্স বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, ভোক্তা আস্থা পৌঁছেছে ১২ বছরের সর্বনিম্ন পর্যায়ে।
গ্রাউন্ডওয়ার্কের জ্যাকেজ বলেন, ‘প্রতিটি খবরে যদি তারা শুধু নেতিবাচক কিছুই দেখে এবং চীন বা অন্য বাণিজ্যিক অংশীদারদের পারমাণবিক পদক্ষেপের হুমকি শোনে, তাহলে ভোক্তারা স্বাভাবিকভাবেই খরচ কমিয়ে দেবে।’
এই অস্থিরতার মাঝে, বিশ্ব বাজারে চীনের ‘ঋণ অস্ত্র’ ব্যবহার আদৌ ঘটবে কি না, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। তবে, সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।