শিশুদের স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখতে ‘ডিসকানেক্ট মুভমেন্ট' কর্মসূচি চালু করেছেন ব্রাজিলের অভিভাবকরা। তবে গবেষণা বলছে ভিন্ন কথা- স্মার্টফোন শিশুদের জন্য উপকারীও হতে পারে।

১৪ বছরের কমবয়সি শিশুদেরকে স্মার্টফোন থেকে দূরে রাখতে একত্রে কাজ করছেন ব্রাজিলের অভিভাবকরা। এক্ষেত্রে তারা কাউকেই বাদ রাখতে চান না। তবে এক গবেষণা বলছে স্মার্টফোন শিশুদের জন্য উপকারীও হতে পারে।

শিশুদেরকে সহজে মোবাইল ফোন দিতে চান না বিশ্বের অনেক দেশের অভিভাবকরা। ব্রাজিলে এমন এক উদ্যোগের নাম ‘ডিসকানেক্ট মুভমেন্ট'। তারা ১৪ বছরের কম বয়সিদের মোবাইল না দেয়ার পক্ষে।

ডিসকানেক্ট মুভমেন্টের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মারিয়েনা উচশোয়া বলেন, ‘আমরা মনে করি, শিশুদেরকে শুধুমাত্র তখনই স্মার্টফোন দেয়া উচিত যখন তারা সেটা পরিচালনায় সক্ষম। এ সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলার এটাই সবচেয়ে ভালো পন্থা।’

উদ্যোগটি বড় গোষ্ঠী বা পুরো স্কুলকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে তাদের সম্মত হতে হয় যে ১৪ বছর বয়সের আগে ডিজিটাল প্রযুক্তি শিশুদের দেয়া যাবে না৷

অভিভাবকদের দ্বিধা

শিশুদের আবার বঞ্চিতও করতে চান না কিছু অভিভাবক৷ অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মা প্যাট্রিসিয়া ব্রমবার্গ বলেন, ‘আপনি যদি স্মার্টফোন, বিশেষ করে হোয়াটসঅ্যাপ নিষিদ্ধ করেন যা যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়, তাহলে কিছু শিশু পার্টির মতো ইভেন্টের দাওয়াত নাও পেতে পারে।’

ফ্লোরিডায় এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সি ৮০% শিশুর স্মার্টফোন রয়েছে। যাদের ফোন নেই তাদের জন্য ব্যাপারটা সুবিধার নয়।

সাউথ ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জাস্টিন ডি. মার্টিন বলেন, ‘ফোন না থাকা শিশুরাও প্রান্তিকীকরণ, সাইবার বুলিং বা অন্য কোনো দুর্ব্যবহারের শিকার হতে পারে।’

স্মার্টফোনের ইতিবাচক দিক

গবেষণায় স্মার্টফোনের ইতিবাচক দিকও উঠে এসেছে৷ জাস্টিন ডি. মার্টিন জানান, ‘স্মার্টফোন থাকা শিশুরা আমাদের মূল্যায়নে আসলে সবক্ষেত্রেই ভালো করেছে। তারা প্রতি সপ্তাহে বন্ধুদের সঙ্গেও বেশি আড্ডা দেয়৷ অনলাইনেও বন্ধুদের সঙ্গে বেশি সময় কাটায়।’

সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব

স্মার্টফোনের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্যতম ইস্যু সোশ্যাল মিডিয়া৷ ডেনিশ এক গবেষণায় দেখা গেছে, নয় থেকে ১৪ বছর বয়সিরা প্রতিদিন গড়ে তিন ঘণ্টা টিকটক এবং ইউটিউবে কাটায়৷

সাউথ ফ্লরিডা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জাস্টিন ডি. মার্টিন মনে করেন, ‘‘সমস্যাটা হয়ত ফোন নয়, ফোন ব্যবহার করে শিশুরা কী করছে সেটা৷''

শিশুরা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে ও নিজেদেরকে সৃজনশীলভাবে উপস্থাপনে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে৷ কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্যের উপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব কী?

গবেষণার মিশ্র ফলাফল

বিভিন্ন গবেষণায় মিশ্র ফলাফল পাওয়া গেছে। কেউ কেউ বিষন্নতার সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ার সরাসরি সংযোগ দেখছেন। অন্যদের বক্তব্য, সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ধরনের উপর অনেক কিছু নির্ভর করে।

জাস্টিন ডি. মার্টিন বলেন, ‘‘আমার দেখেছি, সোশ্যাল মিডিয়ার মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার বিষন্নতা এবং ব্যাকুলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। কিন্তু এটা শুধু শিশুদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বিশেষ করে যখন তারা তাদের প্রিয় অ্যাপ দিনে ছয় ঘণ্টার বেশি ব্যবহার করে।''

ইটিং ডিসঅর্ডার বা অস্বাস্থ্যকর সৌন্দর্যের মাপকাঠি অনুসরণে সোশ্যাল মিডিয়া প্রভাবিত করতে পারে। অ্যাপে কিছু পোস্ট করলে অন্যরা মন্তব্য করতে উৎসাহিত হয়। বিভিন্ন মন্তব্যও শিশুদের উপর প্রভাব ফেলে।

সাউথ ফ্লোরিডা ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক জাস্টিন ডি. মার্টিন জানান, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় পাবলিকলি পোস্ট করা শিশুদের মধ্যে হতাশা, উৎকণ্ঠা, রাগী ভাব এবং সহজেই মেজাজ হারানোসহ আত্মসম্মান হ্রাসের ঘটনা ঘটে।’

নেতিবাচক মন্তব্য বা উপেক্ষিত হওয়া থেকে এধরনের প্রতিক্রিয়া হতে পারে৷

////