পিসিওএস ও নারীর জীবন: জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসেই লুকিয়ে আছে সমাধান

বর্তমানে নারীদের অন্যতম সাধারণ হরমোনজনিত সমস্যা হচ্ছে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা পিসিওএস। এটি এমন এক জটিল শারীরিক অবস্থা, যেখানে ডিম্বাশয়ে একাধিক ছোট সিস্ট তৈরি হয় এবং মাসিকচক্র ব্যাহত হয়। এটি শুধু প্রজনন নয়, বরং পুরো শরীরের হরমোন ভারসাম্য,ওজন, ত্বক, চুল, এমনকি মেটাবলিজমেও দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলে।
পিসিওএস কেন হয়?
পিসিওএস এর নির্দিষ্ট কোনো একক কারণ নেই, তবে বেশ কিছু কারণ প্রভাব ফেলে যেমন-
১. ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স: শরীর ইনসুলিন হরমোনকে ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারে না। রক্তে ইনসুলিন বেড়ে যায়। এতে ওভারিতে অ্যান্ড্রোজেন হরমোন তৈরি বাড়ে, এর ফলে ওভ্যুলেশন ব্যাহত হয়। ফলে ওভারিতে অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজেন তৈরি হয়।
২. অ্যান্ড্রোজেন হরমোন: শরীরে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে পুরুষ হরমোন তৈরি হয়, যার ফলে মুখে লোম, ব্রণ, মাসিক অনিয়ম হয়ে থাকে।
৩. অতিরিক্ত ওজন: ওজন বাড়লে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে এবং হরমোন ভারসাম্য নষ্ট হয়।
৪. জেনেটিক ফ্যাক্টর: জেনেটিক ফ্যাক্টরও প্রভাব ফেলে থাকে।
পিসিওএস লাইফস্টাইল ও খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে সম্পর্ক
অনিয়মিত খাওয়া, ফাস্টফুড, চিনি ও ক্যালোরি-ভরা খাবার পিসিওএস-এর ঝুঁকি বাড়ায়। পাশাপাশি কম ঘুম, দীর্ঘ সময় বসে থাকা, ব্যায়ামের অভাব ও মানসিক চাপ এই সমস্যা আরও তীব্র করে তোলে। শুধু ওষুধ নয়, সঠিক লাইফস্টাইল ও নিউট্রিশন থেরাপি-ই হতে পারে মূল চিকিৎসা।
– খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখতে পারে
– কম গ্লাইসেমিক ইনডেক্স খাবার গ্রহণ করুন।
– উচ্চ ফাইবারযুক্ত ফল, শাকসবজি এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন গ্রহণ করতে হবে।
– পর্যাপ্ত পানি ডান, সময়মতো ও পরিমিত খাবার খাওয়া।
– ওমেগা-৩, বাদাম, ডিমের সাদা অংশ খেতে হবে।
– চিনি, ফাস্টফুড, প্রক্রিয়াজাত খাবার এড়ানো উচিত।
– মাত্র ১০% ওজন কমালেও অনেক লক্ষণ কমে যায়।
পিসিওএস থাকলে অবহেলা করা অনুচিত। দীর্ঘমেয়াদে চিকিৎসা না করা হয় তাহলে ভবিষ্যতে নিম্নলিখিত সমস্যা হতে পারে:
– ইনফার্টিলিটি (বন্ধ্যাত্ব)
– উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেশার ও কোলেস্টেরল
– টাইপ-২ ডায়াবেটিস
– বিষণ্ণতা বা ডিপ্রেশন
– গর্ভকালীন জটিলতা
– হৃৎপিণ্ডের রোগ
– এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যান্সার
পিসিওএস চিকিৎসা শুধু ওষুধ নির্ভর নয়। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত শরীরচর্চা ও মানসিক প্রশান্তি-এই তিনটি হলে পিসিওএস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
লেখক : শেখ সুবর্ণা আক্তার সিনথী, নিউট্রিশনিস্ট এন্ড কনসালটেন্ট ডায়েটিশিয়ান; বাংলাদেশ লেজার এন্ড সেল সার্জারি ইনস্টিটিউট এন্ড হসপিটাল।