বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট আইএমএফ

বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক কর্মক্ষমতার সাম্প্রতিক অগ্রগতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বৃহস্পতিবার রাজধানীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন বাংলাদেশে সফররত আইএমএফ মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও।
ক্রিস পাপাজর্জিও বলেছেন, গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে পুনরুদ্ধার ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতায় বাংলাদেশের খুব ভালো অগ্রগতি হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ উপদেষ্টা ও গভর্নরের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের এই অগ্রগতির প্রশংসা করা উচিত।
গত ৬ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে বাংলাদেশ সফর করে আইএমএফ মিশন। এ সময় তারা আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি (ইসিএফ), এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটি (ইএফএফ) এবং রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) এর আওতায় তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার প্রেক্ষাপটে দেশের অর্থনৈতিক ও আর্থিক নীতিসংক্রান্ত বিষয়াবলি নিয়ে আলোচনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো একাধিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশের মুদ্রাস্ফীতি ১১ দশমিক সাত শতাংশে পৌঁছায়, যা গত এক দশকে সর্বোচ্চ। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে মুদ্রাস্ফীতি ৯ দশমিক চার শতাংশে নেমে আসে। কিন্তু এখনও তা বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার পাঁচ থেকে ছয় শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি রয়ে গেছে।
ক্রমবর্ধমান বিদেশি অর্থায়নের ঘাটতি মোকাবিলা ও চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে স্বল্পমেয়াদি নীতি কঠোর করা অপরিহার্য বলে মনে করেন ক্রিস পাপাজর্জিও। ব্যাপক কর অগ্রাধিকারমূলক ব্যবস্থা অপসারণ ও কর ব্যবস্থা সহজ করতে করনীতি সংস্কার দ্রুত বাস্তবায়নে কর ব্যবস্থা সহজিকরণ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি।
আইএমএফ মিশন প্রধান বলেন, বাংলাদেশের কর ও জিডিপির মধ্যে অনুপাতের হার ধারাবাহিকভাবে কম থাকায় কর সংস্কারের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেয়। যার লক্ষ্য আরও ন্যায়সঙ্গত, স্বচ্ছ ও সুবিন্যস্ত কর ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা টেকসই রাজস্ব বৃদ্ধি নিশ্চিত, ব্যাপক কর অব্যাহতি হ্রাস, আদেশ প্রতিপালন উন্নত ও প্রশাসন থেকে কর নীতিকে সরাসরি পৃথক করে।
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আর্থিক খাতের পুঙ্খানুপুঙ্খ ও ক্রমানুসারে সংস্কার অপরিহার্য বলে মনে করেন ক্রিস পাপাজর্জিও। তিনি বলেন, আইনি সংস্কার আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত এবং কর্তৃপক্ষকে নতুন কাঠামো কার্যকর করার জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যা ক্ষুদ্র আমানতকারীদের সুরক্ষার পাশাপাশি সুশৃঙ্খল ব্যাংক পুনর্গঠন সক্ষম করবে।
ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, ইফেক্টিভ অ্যাসেট কোয়ালিটি রিভিউ (একিউআরএস) ঝুঁকিপূর্ণ তত্ত্বাবধানকে শক্তিশালী এবং উন্নত শাসন ও স্বচ্ছতায় উন্নয়ন করে থাকে, যা আস্থা পুনরুদ্ধার ও অর্থনীতি খাতের মানকে সমর্থন করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। একই সঙ্গে, দীর্ঘমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনীতি ও আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং আর্থিক খাতের সংস্কার সফলভাবে বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ও শাসনব্যবস্থা বৃদ্ধির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হবে।
দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাঠামোগত সংস্কারের গতি বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুশাসনে অগ্রগতি ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধি আরও অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ তৈরিতে সহায়তা করবে। বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ (এফডিআই) বৃদ্ধিতে ও তৈরি পোশাক বাইরে রপ্তানি খাত সম্প্রসারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এএমএল বা সিএফটি (মানি লন্ডারিং বিরোধী/ সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন মোকাবেলা) ঝুঁকি মূল্যায়নে অগ্রগতি ও উপাত্তের মান বৃদ্ধি সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন আইএমএফ মিশন প্রধান।
ক্রিস পাপাজর্জিও বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ কর্মসূচি পর্যালোচনা সম্পন্ন করার পথ প্রশস্ত করতে অদূর ভবিষ্যতে কর্মী-স্তরের একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ২০২৫ সালের এপ্রিলে ওয়াশিংটন ডিসিতে আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠক। এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে বাংলাদেশ ও এর জনগণকে সমর্থন করতে আমরা আমাদের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছি।