২৩ জুলাই ২০২৪
শিক্ষার্থীদের ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম, সারাদেশে গ্রেপ্তার ১১০০

কোটা সংস্কার আন্দোলনের তীব্রতা, দেশজুড়ে ব্যাপক গ্রেপ্তার ও হতাহতের ঘটনার মধ্যেই মঙ্গলবার (২৩ জুলাই, ২০২৪) সরকার সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ও ৭ শতাংশ কোটার বিধান রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর মধ্য দিয়ে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরির নিয়োগে ৯ম থেকে ২০তম গ্রেডের ক্ষেত্রে এই বিধান কার্যকর হয়। (সূত্র: প্রথম আলো, ২৪ জুলাই, ২০২৪)।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরকারের প্রতি চার দফা দাবি জানিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষে এই দাবিগুলো তুলে ধরেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি মন্তব্য করেন, দাবি মেনে নিলে সংলাপের রাস্তা তৈরি হবে।
শিক্ষার্থীদের চার দফা দাবিগুলো ছিল ইন্টারনেট চালু করা, কারফিউ প্রত্যাহার করা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরিয়ে নিয়ে আবাসিক হল খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা ও সারাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ১৮ জুলাই থেকে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদ নিখোঁজ রয়েছেন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের ‘চিরুনি অভিযান’ অব্যাহত রেখেছে। সোমবার (২২ জুলাই, ২০২৪) রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত সারাদেশে আরও প্রায় এক ১০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় অন্তত ৫১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ নিয়ে এক সপ্তাহে (১৭-২৩ জুলাই, ২০২৪) সারাদেশে গ্রেপ্তারের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছিল। রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ, হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় মঙ্গলবার আরও ৩৮টি মামলা হয়। উল্লেখ্য, ১৬ জুলাই সারাদেশে আন্দোলনে ৬ জন নিহত হওয়ার পর কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়।
এরমধ্যে সোমবার টানা ষষ্ঠ দিনের মতো পুরো বাংলাদেশ ইন্টারনেটবিহীন। তবে রাতের দিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। জরুরি সেবা, আর্থিক ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমসহ কিছু খাতকে প্রাধান্য দিয়ে এই ইন্টারনেট সেবা চালু করা হলেও সবাই ইন্টারনেট পাননি।
২৩ জুলাইও সারাদেশে সাধারণ ছুটি ছিল। কারফিউ অব্যাহত থাকায় দেশের পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হতে শুরু করে। মহাসড়কগুলোতে যান চলাচলও শুরু হয়। সরকার চলমান কারফিউ আরও শিথিল করেছে।
এদিকে, সরকারি-বেসরকারি অফিস বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল ১১টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত চার ঘণ্টার জন্য খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে, দেশের রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানাগুলোও খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এদিন তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, শিক্ষার্থীদের কাউকে মামলায় জড়ানো হলে তাদের তথ্য যদি কোটা আন্দোলনকারীরা দেন, তাহলে তা অবশ্যই যাচাই-বাছাই করে দেখবে সরকার।
সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেন, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আবাসিক হল খুলে দেওয়া যাবে না।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) তৎকালীন মহাপরিচালক মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ছাত্র আন্দোলনের নামে যারা নাশকতা চালিয়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অপরাধীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।