কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে রাজধানীতে প্রস্তুত ২০ হাজার ২৬৭ পরিচ্ছন্নকর্মী

কোরবানির পশুর বর্জ্য ১২ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। এ জন্য প্রায় ২০ হাজার ২৬৭ জন পরিচ্ছন্নকর্মী প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সকালে রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রশাসক শাহজাহান মিয়া।
দ্রুততম সময়ের মধ্যে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে দুই সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের কর্মীদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে শাহজাহান মিয়া বলেন, দ্রুত ও নির্ধারিত সময়েই বর্জ্য অপসারণে হটলাইন খোলা থাকবে এবং বর্জ্য অপসারণের জন্য প্রায় ১৩ লাখ ৯০ হাজার প্লাস্টিক, পলিব্যাগ ও বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ সরবরাহ করেছে দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।
ঈদের দিন বিকেল ৩টা থেকে বর্জ্য অপসারণের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন দুই সিটির প্রশাসক। আসন্ন কোরবানির ঈদে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রায় সাত লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। এসব পশু থেকে কমপক্ষে অর্ধ লাখ টন বর্জ্য সৃষ্টি হবে।
মো. শাহজাহান মিয়া জানান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন অধিক্ষেত্রভুক্ত এলাকায় কোরবানির পশুর হাট এবং কোরবানির পশুর সৃষ্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কার্যক্রমসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সরেজমিনে তদারকির লক্ষ্যে ডিএসসিসির উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদারকি পরিষদ গঠন করা হয়েছে। ঈদুল আজহা উদযাপন উপলক্ষে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, পরিবহণ বিভাগ ও যান্ত্রিক বিভাগের সব স্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীসহ তদারকির দায়িত্বে নিয়োজিত অন্যান্য বিভাগের কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
প্রশাসক শাহজাহান মিয়া আরও জানান, কোরবানির বর্জ্য ও সাধারণ বর্জ্য অপসারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নিজস্ব ২০৭টি ডাম্প ট্রাক, ২০০টি মিনি ট্রাক, ৪৪টি কম্পেক্টর, ৩৯টি কনটেইনার ক্যারিয়ার, ১৬টি পে-লোডার, পাঁচটি টায়ার ডোজার, নয়টি পানির গাড়ি, দুটি বুলডোজার, চারটি এক্সেভেটর, তিনটি গাড়িবাহী এয়ার কম্প্রেসার, দুটি ফর্ক লিফ্ট, তিনটি স্কিড লোডারসহ বিভিন্ন যানবাহন ও যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া পর্যাপ্ত হাতগাড়ি, বেলচা ও টুকরিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল ওয়ার্ড পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়েছে।
প্রশাসক আরও জানান, দক্ষিণ সিটির ৩০ হাজার টন কোরবানির বর্জ্য অপসারণে ডিএসসিসির নিজস্ব জনবল পাঁচ হাজার ৯৫৩ জন, ৭৫টি ওয়ার্ডে নিয়োজিত প্রাথমিক বর্জ্য সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের চার হাজার ৭০০ জন এবং পশুর হাটের জন্য এক হাজার ৮০০ জনসহ সর্বমোট ১০ হাজার ২৬৭ পরিচ্ছন্নকর্মী পরিচ্ছন্নতা কাজে নিয়োজিত থাকবে। পশুর হাটের বর্জ্য, কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ এবং রাস্তা ধৌতকরণ পরবর্তী ২২২ গ্যালন জীবাণুনাশক ও ৪০ টন ব্লিচিং পাউডার বিতরণ করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুযায়ী আরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণের লক্ষ্যে কোরবানিদাতাদের মধ্যে বিনামূল্যে সরবরাহের লক্ষে এক লাখ ৪০ হাজার বায়ো-ডিগ্রেডেবল ব্যাগ বিতরণ করা হয়েছে। পশুর হাটে পশুদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে অসুস্থ পশু নির্বাচন এবং চিকিৎসা প্রদানে প্রতিটি পশুর হাটের জন্য একটি করে মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে এবং গত মঙ্গলবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেডিকেল টিমের কার্যক্রম শুরু হয়। কোরবানির পশু বর্জ্য অপসারণ এর তথ্য জানতে ও জানাতে হটলাইন নম্বর চালু করেছে ডিএসসিসি। নম্বরগুলো হলো ০১৭০৯-৯০০৮৮৮, ০২২২ ৩৩৮ ৬০১৪।
এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানান, কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণে জনসচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে মাইকিং, প্রতিটি মসজিদের ইমাম সাহেবদের মাধ্যমে নামাজের পর ও জুমার খুতবার সময় কোরবানি পশু জবাই ও বর্জ্য অপসারণ বিষয়ে মুসুল্লিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ডিএনসিসিতে এবার ঈদে প্রায় ২০ হাজার টন বর্জ্য তৈরি হবে। এসব বর্জ্য দ্রুততার সঙ্গে অপসারণ করার জন্য সিটি করপোরেশনের প্রায় ১০ হাজার কর্মী তিন দিনব্যাপী নিয়োজিত থাকবে।
এবার ঈদে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজে ২২৪টি ডাম্প ট্রাক, ৩৮১টি পিকআপ, ২৪টি পে-লোডারসহ অন্যান্য যান-যন্ত্রপাতি সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবে বলে প্রশাসক জানান।
বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনার জন্য ১২ লাখ ৫০ হাজার পলি ব্যাগ, আড়াই হাজার বস্তা ব্লিচিং পাউডার, চার হাজার ক্যান জীবাণুনাশক বিতরণ করা হয়েছে উল্লেখ করে মোহাম্মদ এজাজ জানান, আমিন বাজার ল্যান্ডফিলে কোরবানির পশুর বর্জ্য ডাম্পিংয়ের জন্য আলাদা প্লাটফর্ম রেডি রাখা হয়েছে এবং পরিবেশসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য দুটি পরিখা খনন করা হয়েছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম মনিটরিংয়ের জন্য ডিএনসিসির কর্মকর্তা কর্মচারীদের সমন্বয়ে তদারকি টিম গঠন করা হয়েছে।
প্রশাসক আরও জানান, প্রথমে কোরবানির বর্জ্য সংগ্রহ করে এসটিএসে আনা হবে এবং এসটিএস থেকে বর্জ্য ডাম্পিং স্টেশনে (আমিন বাজার ল্যান্ডফিল) ডাম্প করা হবে।
ডিএনসিসির কর্মকর্তারা জানান, জবাই করা কোরবানির পশুর বর্জ্য তাৎক্ষণিকভাবে অপসারণ এবং কোরবানির পশুর হাটগুলো দ্রুত পরিষ্কারের লক্ষ্যে ঈদের আগের দিন থেকে ঈদের পরবর্তী দুদিন নিরবচ্ছিন্নভাবে বর্জ্য অপসারণের জন্য বর্জ্যবাহী ড্রাম্প ট্রাক/খোলা ট্রাক, ভারী যান-যন্ত্রপাতি, পানির গাড়ি, বেসরকারি এবং ভাড়ায় পিকআপ নিয়োজিত থাকবে।
কোরবানি পশুর বর্জ্য অপসারণে প্লট-২৩-২৬, সড়ক-৪৬, গুলশান-২, নগর ভবনে অস্থায়ী কেন্দ্রীয় কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর : +৮৮০২৫৫০৫২০৮৪, ১৬১০৬।