জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে রিভিউয়ের এক সংক্ষিপ্ত রায়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আজ মঙ্গলবার (৬ মে) মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর অপর নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিলের ওপর প্রথম দিনের শুনানি শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।  

আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ টি এম আজহারুল ইসলামের আপিলের ওপর পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী বৃহস্পতিবার (৮ মে) দিন ধার্য করেছেন।

আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেছেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম।

শুনানি শেষে আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রায় ৯০ শতাংশ শুনানি শেষ হয়েছে। আবার বৃহস্পতিবার শুনানি হবে।’

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘জামায়াত নেতা কাদের মোল্লাকে রিভিউয়ের এক সংক্ষিপ্ত রায়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছিল। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর এটা করা হয়। কারণ ৫ জানুয়ারি নির্বাচন ছিল দেশে। নির্বাচনের আগে ফাঁসি দিতে হবে, তাই এটা করা হয়।’

শিশির মনির আরও বলেন, ‘রিভিউ যখন খারিজ হয়, কেন খারিজ হলো সেটার কারণ লিখে ফাঁসি দিতে হতো। কিন্তু সংক্ষিপ্ত রায়ে লেখা ছিল না, কী কারণে রিভিউ খারিজ করা হলো। সংক্ষিপ্ত রায় সাধারণত আসামিকে কারাগার থেকে বের করার সময় করা হয়।’

এ সময় উপস্থিত ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জোবায়ের, অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন হেলাল, নির্বাহী পরিষদ সদস্য মোবারক হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামীর আমির নুরুল ইসলাম বুলবুলসহ অনেকে।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে গণহত্যা-হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ, আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং বাড়িঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছিল এ টি এম আজহারের বিরুদ্ধে।

২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া রায়ে ২ নম্বর, ৩ নম্বর ও ৪ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির দণ্ডাদেশ পান জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সহকারী সেক্রটারি জেনারেল আজহারুল ইসলাম। এ ছাড়া ৫ নম্বর অভিযোগে অপহরণ, নির্যাতন, ধর্ষণসহ বিভিন্ন অমানবিক অপরাধের দায়ে ২৫ বছর এবং ৬ নম্বর অভিযোগে নির্যাতনের দায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়।

ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলে শুনানির পর ২০১৯ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে রায় ঘোষণা করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। আপিল বিভাগের রায়ে ২, ৩, ৪ (সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে) এবং ৬ নম্বর অভিযোগের দণ্ড বহাল রাখা হয়। আর ৫ নম্বর অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়।

ওই দিন আদালতে আসামিপক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী (প্রয়াত) খন্দকার মাহবুব হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন (প্রয়াত) অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

২০২০ সালের ১৫ মার্চ আপিল বিভাগের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ওই রায়ের রিভিউ চেয়ে ২০২০ সালের ১৯ জুলাই আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট আবেদন করেছিলেন এ টি এম আজহারুল ইসলাম। ২৩ পৃষ্ঠার পুনর্বিবেচনার এ আবেদনে মোট ১৪টি যুক্তি উপস্থাপন করা হয়।

ওই পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি শেষে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে এ টি এম আজহারুল ইসলামকে আপিলের অনুমতি দেন। এরপর তিনি আপিল করেন।