পাবনায় সরকারি জায়গা দখল!

পাবনার ঈশ্বরদীতে সড়ক বিভাগের জায়গা দখলের হিড়িক পড়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নির্দেশে দখলদাররা এরই মধ্যে সড়ক বিভাগের খামারের আবাদি জমিতে ১৫০টি ঘরবাড়ি নির্মাণ করে সেখানে বসবাস শুরু করেছেন। পাবনা জেলা প্রশাসন, পুলিশ সুপার ও ঈশ্বরদী থানা পুলিশকে জানিয়েও অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করতে পারছে না সড়ক বিভাগ। দখলের ফলে খামারে আখসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদে ঝুঁকি ও সংকট দেখা দিয়েছে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নাটোর জেলার লালপুরে অবস্থিত নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের আওতাধীন ঈশ্বরদীর মুলাডুলি বাণিজ্যিক খামার থেকে মুলাডুলি কলেজ পর্যন্ত কাশিনাথপুর-দাশুড়িয়া-নাটোর-রাজশাহী মহাসড়কের পূর্ব পাশ এরই মধ্যে দখল হয়ে গেছে। এখন দখলদাররা মহাসড়কের পশ্চিম পাশে মুলাডুলিতে সড়ক বিভাগের বাণিজ্যিক খামারের জায়গা দখল করে দীর্ঘ এক কিলোমিটার জায়গায় এরই মধ্যে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা গড়ে তুলেছে। মহাসড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২-এর আওতাধীন। খামার কর্তৃপক্ষ জানায়, মহাসড়কের ওই জায়গা খামারের।
খামার কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, মুলাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, মেম্বার ও কতিপয় ব্যক্তির মদদে খামারের জায়গায় দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খামারের প্রবেশপথ থেকে মুলাডুলি কলেজ পর্যন্ত মহাসড়কের পূর্ব ও পশ্চিম পাশে দখলদাররা বাঁশ, টিন, সিমেন্টের খুঁটি ইত্যাদি গৃহ নির্মাণসামগ্রী এনে জায়গা দখল করে রেখেছেন। অনেকে ঘর তৈরি করছেন। এরই মধ্যে মহাসড়কের পূর্বপাশে দেড় শতাধিক ঘর তৈরি হয়েছে। খামারের পশ্চিম পাশে আরো ১৫০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, যা মুলাডুলি বাণিজ্যিক খামারের জায়গা বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। মহাসড়কের পাশের জায়গা থেকে মাটি কেটে সেই দখলদাররা ঘরের ভিটা বানাচ্ছেন। মাটি কেটে নেওয়ায় মহাসড়কের পাশে কয়েকটি বড় গর্ত দেখতে পাওয়া যায়।
দখলদাররা জানান, মুলাডুলি ইউপির চেয়ারম্যান সেলিম মালিথা, ইউপি সদস্য আলাউল ইসলাম ওরফে নশু মেম্বার ও স্থানীয় কয়েক ব্যক্তির পরামর্শে তারা এখানে বাড়িঘর তৈরি করছেন। এ জন্য নশু মেম্বারকে কিছু টাকা দিতে হচ্ছে তাঁদের। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দখলদার জানান, তিনি ঘর করার জন্য মেম্বারকে পাঁচ হাজার টাকা দিয়েছেন।
মুলাডুলি বাণিজ্যিক খামারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান জানান, খামারের জায়গা দখলের কারণে সেই জমিতে আখসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ নিয়ে তারা সংকট ও শঙ্কার মধ্যে পড়েছেন। কারণ, খামারের নিজস্ব চাষের জমিতে তৈরি বাড়িঘরের রান্নার চুলা তৈরি করা হয়েছে ফসলি জমির পাশে। এতে যে কোনো সময় ক্ষেতে আগুন লেগে যেতে পারে। সেই আগুন কয়েক শত একর জমির ফসলে ছড়িয়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটাতে পারে। এ ছাড়া দখলদারদের উন্মুক্ত পায়খানার দুর্গন্ধে পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। আর গৃহপালিত পশু, হাঁস-মুরগি সহজেই জমিতে ঢুকে খামারের ফসল নষ্ট করে দিতে পারে।
যোগাযোগ করা হলে মুলাডুলি ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম মালিথা জানান, দখলের ওই জায়গায় এলাকার দুস্থ ও ভূমিহীনরা বসতি স্থাপন করছেন। কাউকে তিনি ঘরবাড়ি তৈরির জন্য পরামর্শ দেননি। চেয়ারম্যান দাবি করেন, দখলের জায়গায় বাড়িঘর তৈরি হওয়ায় সেখানে এরই মধ্যে চুরি-ডাকাতি বন্ধ হয়েছে। তিনি স্বীকার করে বলেন, তাঁর পরিষদের সদস্য আলাউল ইসলাম ও স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি বসতি স্থাপনে সহযোগিতা করছেন। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে নশু মেম্বার জানান, সরকারি জায়গায় ঘর তোলার জন্য তিনি মানুষকে সহযোগিতা করলেও কারো কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেননি।
পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার মুঠোফোনে জানান, উচ্ছেদের জন্য মুলাডুলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও দখলদারদের এরই মধ্যে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এখন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের মাধ্যমে মহাসড়কের জায়গা থেকে অবৈধ বাড়িঘর ও দখলদারদের উচ্ছেদ করতে তিনি পাবনার জেলা প্রশাসককে চিঠি দেবেন।