জাওয়াদের অভিমুখ ভারতের দিকে, বাংলাদেশে কী প্রভাব ফেলবে

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় ‘জাওয়াদ’-এর অধিকাংশ অভিমুখই এখন পর্যন্ত ভারতের উপকূলের দিকে। তবে এর কিছুটা অংশ বাংলাদেশেও প্রভাব বিস্তার করতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এরই মধ্যে আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় এক পূর্বাভাসে দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে দুই নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
আজ রাত সাড়ে ১০টার দিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ ড. মোহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক ঘূর্ণিঝড়ের বর্তমান অবস্থান সম্পর্কে জানাতে গিয়ে বলেন, ‘এখন ঘূর্ণিঝড়টি যে অবস্থায় আছে তাতে এর ৭৫ থেকে ৮০ ভাগ অভিমুখ ভারতের উপকূল অভিমুখী। বাকি ২০ থেকে ২৫ শতাংশের বডি মুভমেন্ট রয়েছে বাংলাদেশের দিকে।’
আবহাওয়াবিদ এনটিভি অনলাইনকে আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় অনেক দূরের সমুদ্রে থাকা অবস্থায় একটি রহস্যময় অবস্থানে থাকে। এর গতিমুখ যেকোনো সময় পরিবর্তন হতে পারে। গতিবেগ বাড়তে বা কমতে পারে। ফলে এ সম্পর্কে এখনি চূড়ান্ত কিছু বলার সময় আসেনি। আমরা গভীরভাবে এটি পর্যবেক্ষণ করছি।’
এদিকে আজ রাতে আবহাওয়া কার্যালয়ের ঘূর্ণিঝড় সংক্রান্ত সবশেষ পাঁচ নম্বর বুলেটিনে বলা হয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড়টি আরও উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় ১৫ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ এবং ৮৫ দশমিক ২ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে অবস্থান করছে।
এটি আজ সন্ধ্যা ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার ৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে এক হাজার ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণপশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৬০ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ, দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৫৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ ঘণ্টায় ৬২ কিলোমিটার; যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই উত্তাল রয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরকে এক নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তাদেরকে গভীর সাগরে বিচরণ না করার জন্যও বলা হলো।
ঘূর্ণিঝড়টি কখন উপকূলে বা স্থলভাগের দিকে আসতে পারে- এমন প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘এখন যে অবস্থায় আছে, তাতে ধারণা করা যায়, আগামীকাল (৪ ডিসেম্বর) শনিবার মধ্যরাতের দিকে এটি শক্তি বাড়াবে এবং ঘূর্ণিঝড় থেকে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে। পরদিন (৫ ডিসেম্বর) রোববার প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি আবার শক্তি কমে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হবে।’
‘ধারণা করা হচ্ছে, এটি ভারতের উড়িষ্যা উপকূলের দিকে এগোবে। এটি যদি উড়িষ্যা উপকূলের স্থলভাগের দিকে উঠে যায় তাহলে বাংলাদেশ অনেকটাই নিরাপদে থাকবে। এ সময় ঝড়ের ব্যাস থাকবে প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ কিলোমিটারের মধ্যে। এটি পশ্চিমবঙ্গের উপকূলের দিকে এগোতে পারে।’
ড. আবুল কালাম মল্লিক আরও বলেন, ‘আমাদের পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত উপকূলের ব্যাস প্রায় সাড়ে ৩০০ কিলোমিটারের মতো। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের ডান দিকের একটি অংশ বাংলাদেশে প্রভাব ফেলতে পারে।’
এক্ষেত্রে খুলনা, বরিশাল, হাতিয়া উপকূলে হালকা বাতাস ও ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে এবং বৃষ্টি হতে পারে বলে জানান আবহাওয়াবিদ ড. মল্লিক। তিনি আরও বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষেত্রে প্রভাব যাই হোক, সতর্কতা হিসেবে উপকূলের মানুষকে সবসময়ই সতর্ক থাকতে হবে। যেন জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো যায়। উপকূলের মানুষকে অবশ্যই আবহাওয়ার বুলেটিনগুলো শুনতে হবে এবং করণীয় সম্পর্কে জানতে হবে।’