ঐতিহ্যবাহী ‘বৈশাখের বাতাসা’

বাঙালির প্রতিটি উৎসবে ফুটে উঠে গ্রাম-বাংলার চিরায়ত সৌন্দর্য। আর এসব উৎসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে গ্রামে গ্রামে বৈশাখী মেলা। মেলায় থাকে রকমারি খাবার। যার মধ্যে অন্যতম খাবার হচ্ছে বাতাসা। প্রাচীনকাল থেকে পটুয়াখালীর বাউফল অঞ্চলে বৈশাখে বাতাসা তৈরি ও বিক্রি হয়ে আসছে। কয়েক দশক আগেও বৈশাখ মাসজুড়ে হাটে বাজারে মেলায় বাতাসার দেখা মিললেও এখন আর চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে বৈশাখের বাতাসা। বিভিন্ন ছোট-বড় হাট বাজার, মেলায় ব্যবসায়ী বাতাসা বিক্রি করতেন। বাংলা নতুন বছরের উৎসব উপলক্ষে এ বাতাসা তৈরি করা হয় বলে এটি বৈশাখের বাতাসা বা বৈশাখী বাতাসা নামে পরিচিত। মিষ্টি কারিগররা চিনি ও মিঠা গলিয়ে বিশেষভাবে এ বাতাসা তৈরি করে। আম, কাঁঠাল, কলা ও দুধের সঙ্গে মিশিয়ে এ বাতাসা খেয়ে থাকেন। খেতে অনেক সুস্বাদু ও সুমিষ্ট।
তবে এক সময় গ্রাম- বাংলায় ব্যাপকভাবে বাতাসা তৈরি ও বিক্রি হতো। দোকানীরা মেলা, হাটে বাজারে বাতাসার পরশা সাজিয়ে বসতেন। যা চিরায়ত বাংলার সৌন্দর্য। মেলায় ঘুরে বাতাসা, ঘোল, দই, কুলফি মালাই ও মুড়িসহ দেশীয় বিভিন্ন খাবারের স্বাদ না নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন এমন মানুষের সংখ্যা খুবই কম। আধুনিকতার ছোঁয়া স্মৃতি থেকে হারিয়ে যাচ্ছে সেই সোনালী শৈশব। আগের মত নেই মেলার সেই আমেজ।এখন আর গ্রামে গ্রামে বসে না মেলা। যে কারণে হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য।
উপজেলার কালাইয়া বন্দরের মিষ্টি ব্যবসায়ী বিরাজ ময়রা বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে মিষ্টি তৈরি ও বিক্রি করি। প্রতি বছর মেলায় বাতাসা তৈরি করা হয়। একযুগ আগেও মেলা আসলেই বাতাসার চাহিদা বেড়ে যেত। গ্রাম-গঞ্জে ছোট বড় মেলা হতো। সেখানে বাতাসা বিক্রি হত। মানুষও কিনতেন। এটি আমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। তবে এখন আর এটির কদর নেই। তারপরেও প্রতি বছরই বাতাসা তৈরি করি। বিক্রি কম হলেও ঐতিহ্যবাহী বাতাসা তৈরি ধরে রেখেছি।
কালাইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি মো. মেহেদী হাসান রাসেল বলেন, আমরা বাঙালির ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। শিকড় থেকে হারিয়ে যাচ্ছি। এক সময় বাংলা নতুন বছরে গ্রামে নানা উৎসাহ উদ্দীপনায় নতুন বছর উদযাপন করা হত। সবাই মিলে মিশে উৎসব করতাম। বাহারি খাবারের স্বাদ নিতাম। বিশেষ করে বাতাসা। দিনদিন সেই সব গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খাবার হারিয়ে যাচ্ছে।