গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ১১৬, অপুষ্টিতে নবজাতকের মৃত্যু

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। এ হামলায় শনিবার (১৯ জুলাই) ভোর থেকে শুরু করে পুরো দিনজুড়ে কমপক্ষে ১১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া ইসরায়েলের টানা অবরোধ ও মানবিক সহায়তার ঘাটতিতে গাজায় এক নবজাতকের মৃত্যু হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে শনিবার (১৯ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের টানা অবরোধ ও মানবিক সহায়তার ঘাটতিতে গাজায় এক নবজাতক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ড. মোহাম্মদ আবু সালমিয়া আল জাজিরাকে জানান, ৩৫ দিন বয়সী ওই শিশু অপুষ্টিতে মারা গেছে। শনিবার হাসপাতালে আরও একজন একই কারণে প্রাণ হারিয়েছেন বলে নিশ্চিত করা হয়েছে।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলো অভূতপূর্ব সংখ্যক ক্ষুধার্ত মানুষের ভিড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন পর্যন্ত ১৭ হাজার শিশুকে মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজায় হামলা অব্যাহত রেখেছে। স্বাস্থ্য সূত্র জানিয়েছে, শনিবার ভোর থেকে শুরু করে পুরো দিনজুড়ে কমপক্ষে ১১৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৮ জন মার্কিন-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রের কাছে খাদ্যের সন্ধানে যাওয়ার সময় গুলিতে নিহত হন।
গাজার সিভিল ডিফেন্স সংস্থার মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল বলেন, দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও রাফাহর দুটি ভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি গুলিতে এসব মানুষ নিহত হয়েছেন। তিনি জানান, হতাহতদের সবার দিকেই “সরাসরি লক্ষ্য করে গুলি চালানো হয়েছে”।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান বলছে, মে মাসের শেষদিক থেকে যখন জাতিসংঘ ও বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার ৪০০ কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে শুধুমাত্র চারটি বিতরণকেন্দ্র চালু করে জিএইচএফ, তখন থেকেই ওইসব স্থানের আশেপাশে ইসরায়েলি বাহিনী ও বেসরকারি মিলিশিয়াদের হাতে প্রায় ৯০০ ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আল-খালিদি বলেন, “একদিকে সাঁজোয়া যান, অন্যদিকে ট্যাঙ্ক – দুই দিক থেকেই গুলি চালানো হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল যেন আমাদের সবাইকে মেরে ফেলার জন্যই এসেছে তারা।”
আরেক প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আল-বারবারি বলেন, “জিএইচএফ-এর ত্রাণ কেন্দ্রগুলো এখন মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। কেউ নিরাপদ নয়। আমার ভাই খাদ্য নিতে গিয়েছিল, বাঁচতে চেয়েছিল। আমরাও বাঁচতে চাই, অন্যদের মতোই।”

গাজা থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খৌদারি জানান, খাদ্যের আশায় লাইনে দাঁড়ানো পরিবারগুলো এখন স্বজনদের দাফন করছে।
এদিকে, জিএইচএফ দাবি করেছে, নিহতের ঘটনাগুলো তাদের কেন্দ্র থেকে “কয়েক কিলোমিটার দূরে এবং তাদের কেন্দ্র খোলার আগেই” ঘটেছে।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে, তারা এ ঘটনার তদন্ত করছে।